Wednesday, December 2, 2020

 

মরমিয়া
হাকিকুর রহমান
ঘণ গগনে ঘিরিলো যে মেঘরাশি,
বিদ্যুৎ সেথা চমকিলো হাসি হাসি।
শাখে পাখিকুল ভিজিলো যে বরষায়,
চারিদিকে তাহা ভরায়ে দিলো তমসায়।।
ক্লান্ত পথিক অতি কষ্টেতে হাঁটে,
শূন্য তরীটি বসিয়া রয়েছে ঘাটে।
বেনুবনে আজি ঝরে গেলো কতফুল,
অঝোর ধারাতে ভাসায়ে দিলো নদীকুল।
এমনি দিনেতে চাহে কি যে মোর হিয়া,
চিত্ত খুলিয়া সাড়া দিবে নাকি, মরমিয়া।।
(সর্বস্বত্ব লেখক কর্তৃক সংরক্ষিত)

 

শাওনের ধারা
হাকিকুর রহমান
অসময়ে আসা শাওনের বারি
ঝরিছে অঝোর ধারায়,
ধারণ করিয়া ঘণ শ্যাম রঙ
গগন নিজেকে হারায়।
সখী চখা-চখি শাখেতে ভিজিয়া
আকুল আঁখিতে চাহে,
আহ্লাদে ভরি চাকত-চাতকী
সেই চেনা সুরে গাহে।
সারা গা ভিজিয়া কোন বিরহিনী
যায় কোন অভিসারে,
আঁখি ছলোছল, বারি টলোমল
কেবা ডাকিলো যে কারে। ....
(সর্বস্বত্ব লেখক কর্তৃক সংরক্ষিত)

 

বিনি সুতোর মালা
হাকিকুর রহমান
মৌন ব্যথায় কাঁদিছে কেতকী
কোন ধূসর অবেলায়,
আঁখি বারি ছাপি বসিয়া চাতকী
মত্ত ভবের খেলায়।
বিরহী বেণুতে ডাকিছে কাহারে
কোন সে নামটি ধরি,
শূন্য হিয়া লয়ে গাঁয়ের বঁধুটি
চলিছে গাগরী ভরি।
আঁধার ঘিরিছে তমালের বনে
কোকিলা ডাকিছে শাখে,
মরমের কথা কইবে কাহারে
সকলই লুকায়ে রাখে।
বেনুবনে আজি ঝরেছে বকুল
কুড়ানোর কেহ নাই,
কে যেন কবে এসেছিলো দ্বারে
পিছু ফিরে চাহে তাই।
লুকালো কোথায় প্রাণের প্রিয়তমা
হারায়ে গিয়াছে কবে,
বিনি সুতি গাঁথা ফুল্য মালাটি
অযতনে কি পড়ে রবে? ...
(সর্বস্বত্ব লেখক কর্তৃক সংরক্ষিত)

 

সৌদামিনী
হাকিকুর রহমান
মেঘের আড়ালে, খুঁজে ফিরে
নিজের আলো’কে
লাজুক সৌদামিনী,
কোথায় লুকালো, সেই দীপশিখা
আধারে ঢাঁকিয়া
নামিলো যে যামিনী।।
আরশিতে মুখ ঢেঁকে, চন্দ্রমল্লিকার কলি
যায় যে কি ছবি এঁকে-
পথহারা পাখি, খুঁজে ফেরে নীড়
নীলিমার পানে
বনে ফুটে কামিনী।।
ছায়াতে ঘিরিয়া রাখে, স্তব্ধ-নিঠুর অতীত
কোন সুরে কারে ডাকে-
বনবীথি ঘিরে, ছড়ায়ে রয়েছে
না বলা কথাগুলি
বিরহিণী তাপিনী।।
(সর্বস্বত্ব লেখক কর্তৃক সংরক্ষিত)

 

অনুরাগী
হাকিকুর রহমান
কঞ্চিখানি বাঁশঝাড়কে ডাকিয়া কহে,
দখিনার সাথে দোলায়িত হই তব ঝাড়ে-
কতনা আনন্দেই দুলি এপাশে-ওপাশে,
যখন বিশেষ করি, দখিনা পবন বহে।
তবু একাকী লাগে নিজেকে বড়ই শীর্ণ,
শাখেতে জড়ায়ে তব, পার করি কাল অতি নির্বিঘ্নে-
তোমারই তো শাখা আমি, আর তাই রহি মহা উৎকীর্ণ।
তবে, যবে পথচারীরা মোরে একা পায়,
বালখিল্যতায় তোমা হ’তে ছিঁড়ে নিতে চায়।
আর আমি একাকীত্বের যন্ত্রণাতে ভুগি,
তুমিতো রয়েছো দাঁড়ায়ে দৃঢ় চিত্তে
সুউচ্চ হয়ে, আকাশটাকে ছুঁইবার নিমিত্তে,
তবে আমি অতিশয় দূর্বল একা
তবু রহি তব অনুরাগী।
(উৎকীর্ণ- অলঙ্কৃত)
(সর্বস্বত্ব লেখক কর্তৃক সংরক্ষিত)

 

প্রকৃত সুখ
হাকিকুর রহমান
কুঁড়েঘর অশ্রুজলে ভিজে, ভেবে যায় দিবারাত্রি
বরষা-বাদল,
সবই তো পড়ে চালার ওপরে
হলোনাকো কেহ সহযাত্রী।
তার উপর রয়েছে, বজ্রপাতের চমকানি
হেরিয়া এহেন অবস্থা,
আধুনিক-অভিজাত
দালান কোঠারা করে যায় কানাকানি।
ঝড়ের দমকা হাওয়ায়,
কুঁড়ের চালাটা বারবার নড়ে যায়।
দালান হাসিয়া কহে,
ওগো কুঁড়েঘর, ওগো
মিছেই তুমি ঝড়-বৃষ্টিতে,
এমনি করে এতো ভোগো।
দেখোতো আমারে, কত শান-শওকতে
রয়েছি যে আমি হেথা,
আর তুমি, সামান্য ঝড়-জলে
ভিজে সারা হও সেথা।
কুঁড়েঘর, অতি গর্বেতে হাসে,
কহে, জানোকিহে বন্ধু
হতে পারি জীর্ণ-শীর্ণ,
তবু কর্তা আমারে অতিশয় ভালোবাসে।
দিতে পারি আমি তারে, বছর ধরে
অন্য রকম সুখ,
তাইতো এত ঝড়-ঝঞ্ঝাতেও
দেখিতে পারো মোর, হাসিখুশী ভরা মুখ।
(সর্বস্বত্ব লেখক কর্তৃক সংরক্ষিত)

 

আকুতি
হাকিকুর রহমান
ওহে অর্ণব,
তব কাছে রহিলো মোর এই মিনতি-
গ্রহণ করোহে এই ক্ষুদ্র জলকণা
চিত্তটা ভরে, ছিনুতো একদা খরস্রোতা অতি।
লইয়া নিজের জলরাশি,
ধাবিত হয়েছি তব পানে-
তপ্ত খরায়, মত্ত বরষায়,
অতিশয় অনুপ্রাণনে।
ওহে জলধি,
কি বিশাল তব পরিধি-
ধরাকে করেছো অচ্ছ-স্বচ্ছ,
নিমিত্ত আমি, করেছি অর্পণ অনাদিকাল ধরে
তব সন্নিধানে, তবে কেন জানি
বাধাগ্রস্ত হয়েছে মোর গতিবিধি।
আকুল পরাণে তব সকাশে কহি,
ক্ষমিয় মোরে নিজ গুনে-
যদিও আমার প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা,
যতদিন আছি এই অবনীতে-
বাধাহীন ভাবে
তব পানে যেন বহি।
(অর্ণব, জলধি- সমুদ্র;
অনুপ্রাণনে- প্রেরণায়;
সন্নিধানে – কাছে;
সকাশে – নিকটে;
অবনী- পৃথিবী)
(সর্বস্বত্ব লেখক কর্তৃক সংরক্ষিত)