Thursday, July 30, 2020

New consciousness
Hakikur Rahman

When there is between desire and attainment
Huge gap
Then the heart will be cut
In the pain of not reconciling the accounts
There must be tears in the heart.
In the direction of the light of the new day
The new journey begins
In the heart of that consciousness
Let the drum sound high.
অভিপ্রায়
হাকিকুর রহমান 

প্রশমিত হোক হৃদয়ের রক্তক্ষরণ,
উজ্জীবিত হোক আত্মার অনুরণন।
প্রজ্জ্বলিত হোক চেতনার বহ্নিশিখা,
জাগরিত হোক ভাবনার চিত্রলিখা।
বিকশিত হোক বিশুদ্ধ উপলব্ধি,
তিরোহিত হোক সংক্রুদ্ধ অভিসন্ধি।
আলোকিত হোক উদ্বুদ্ধ অর্ন্তদৃষ্টি,
বিতাড়িত হোক প্রলুদ্ধ অপসৃষ্টি।
উপলব্ধি
হাকিকুর রহমান 

মসজিদ, মন্দির, ভজনালয়, উপসনালয়
সবই তো আজ হয়ে গেছে অবরুদ্ধ,
স্রষ্টা কি আজ হয়ে গেছে পাষাণ
হয়ে গেছে কি মোদের উপর এতই ক্রুদ্ধ।।
ফিরিছে আজিকে চারিদিকে হাহাকার,
শুনিতেছি শুধুই আর্তের চিৎকার।
বিশ্ব জুড়িয়া চলিছে শোকের মাতম
চিত্ত খুলিয়া উপলব্ধি করিতে হইবে তাহা
হয়ে নিজগুনে বিদগ্ধ।।
কালে কালে বাড়িয়াছে তো
প্রকৃতির কাছে কত ঋণ,
সেতো ঘুরে দাঁড়াবেই, কারণ
তাকে করেছি মোরা যত সঙ্গীণ।
ওহে মনুষ্যকুল!
বিবেকের ধ্বজাকে আজি ওড়াও,
নির্মোহ চিত্তে যত গরল,
যত পাপ আছে অন্তরে, তাদেরে পোড়াও।
বুঝিতে কি পেরেছো এতোদিনে
হয়েছে কত সহস্র ভুল, আর
হয়ে গেছোতো বহু আগেই
নিজেই নিজের বিরুদ্ধ।।
ঘুরিয়া দাঁড়াও আজি
হওহে, নিজেই নিজের কাজী,
এখনও সময় আছে, শুধিবারে নিজেরে
নতুবা অচীরেই সকলে মিলে
হয়ে যেতে হবে স্তব্ধ।।
বিস্মরণের খেয়া
হাকিকুর রহমান 

আলেয়ার আলো দেখে
জ্বালানো হয়নিকো গৃহেতে আমার,
সাঁঝের প্রদীপখানি-
যদিও সেটা জ্বলে নিভু নিভু,
আঁধার কাটেনা তাতে।
অতীব আশা লয়ে বুকে,
ভেবেছিনু এভাবেই কাটিবে
আলোকহীন জীবন মম...।
আশাহত হয়ে ভাবি
কোথা গেলো তাহা হারায়ে-
অতঃপর,
বিস্মরণের খেয়ায় ভেসে
বয়ে যাই নিরবধি,
অনন্তকালের তরে।
ফিরায়ে দাও অরণ্য
হাকিকুর রহমান 

প্রস্তর খচিত প্রাসাদের খেলাঘরে আর
রহিব না হয়ে অবরুদ্ধ,
ফিরিয়া যাইবো সেই গ্রামের পর্ণ-কুটিরে
যেথা স্নিগ্ধ বায়ু বহে বিশুদ্ধ।
রঙ্গালয়ের রঙিন আলোতে, মাঝে মাঝে
নিজেরে চিনিতে পারিনাকো আর
হে ধরণী, দ্বিধা হও, দাও খুলে
মোর হৃদয়ের শৃঙ্খলিত দ্বার।
ফিরায়ে দাও মোরে, সেই অরণ্য
যেথা পড়ে আছে মোর শিশুতোষ দিনগুলি,
চিৎকার করিয়া কহিতে চাই, আমিই চিরসুখী
ঐখানে রহিয়াছে মোর পদধুলি।
প্রয়োজন নাই মোর সিংহদুয়ার
প্রয়োজন নাই মোর এই অনর্থক খ্যাতি,
আমি শিশির সিক্ত ঘাসের উপর
শয়ন করিয়া, চাহিব সুনীল গগনের পানে,
আর গাহিব, প্রাণের আনন্দে দিবা-রাতি।
শেষের শুরু
হাকিকুর রহমান 

গোটা ধরিত্রীটা থমকে গেছে হঠাৎ করে,
কোন এক অজানা আতংকে-
থেমে গেছে কোলাহল,
থেমে গেছে চলাচল,
থেমে গেছে উচ্ছলতা।
নিজেরই অজান্তে,
কিম্বা নিজেরই ইচ্ছায়,
পরিচিত অথচ এক অপরিচিত গন্ডীতে
সীমিত পদচারণ-
ক্লিষ্ট গগনের পানে
নির্লিপ্ত চেয়ে ফেরা।
কে কোথায় আছো, পরিজনেরা?
সাড়া দাও!
কারণ মনটা খুব মুখিয়ে আছে,
স্বজনের সাথে একটু কথোপকথন,
কিম্বা একটু দর্শন, হোকনা তা ইথারে ভাসা।
ক্ষণিকের তরে হলেও
থেমে গেছে সব কর্মযজ্ঞ।
হয়তোবা,
আবার নতুন করে শুরু হবে সবকিছুই,
আবার শুরু হবে কোলাহল,
আবার শুরু হবে চলাচল,
আবার শুরু হবে উচ্ছলতা।
তবে কিসের ইঙ্গিত দিয়ে যায় সে,
এটা কি শুরুর শেষ,
নাকি শেষের শুরু?
কর্ম
হাকিকুর রহমান 

কর্ম হলো শক্তি মোদের
কর্ম করে শান্তি পাই,
নিঃস্ব হলেও স্বস্তি আছে
অকর্মাদের নেইকো ঠাঁই।
শক্ত হাতে দাঁড়টা ধরি
শক্ত হাতে হালটা বাই,
কাছে পিঠে যেটাই থাকুক
বেঁচে থাকার গানটা গাই।
ক্ষুদ্র হউক, তুচ্ছ হউক
কর্ম করে নিত্তি খাই,
খেটে খাওয়ার মাঝেই তো সুখ
বিন্দু তাতে লজ্জা নাই।
বিদায়ী ফাগুন
হাকিকুর রহমান 

ফাগুন চলিয়া যায়,
হৃদয়খানি কাহারে খুঁজিছে
ভরা এই দখিনায়।
কাহারে ফিরিয়া চাহে,
মরমের মাঝে বিরহের পলে
কোন সুরে সে যে গাহে।
ভাবনা কাঁদিয়া ফিরে,
পরাণের কথা রহিল পড়িয়া
ধীরে বহা যমুনার তীরে।
গোধূলি সাজিলো আজি,
দূরের গগনে মেঘের ছায়াতে
সাজিলো তারকারাজি।
জাগিলো পূর্ণ শশী,
স্মৃতির গহীনে জাগিলো যে হিয়া
তৃষিত হৃদয়ে পশী।
অখন্ড এই জোসনায়,
রূপালী আলোতে চিত্ত খুলিয়া
কেবা কাহারে চায়।
ডেকে ফেরা
হাকিকুর রহমান 

ক্লিষ্ট গগনে নীরদেরা করে খেলা,
শূন্য হৃদয়ে কাটেনাতো এই বেলা।
লক্ষীপেঁচারা কেবল ঘুমাতে গেলো,
ফনিমনসার ফুল অসময়ে ফুটে কি পেলো।
রাত জাগানিয়া পাখিরা কি গেয়ে যায়,
অন্ধ কাননে ভ্রমর এক্ষণে কি যে চায়।
বসুধা জেগেছে ঘুম ভাঙ্গানিয়া গানে,
ভোরের হাওয়াতে পরশ লেগেছে প্রাণে।
পার্থসারথি ধাবমান হলো কোথা,
ব্রহ্মকমল ভাসমান হলো হোথা।
ময়ূরীর পানে ময়ূর চাহিয়া রয়,
বনপাপিয়া সুরে সুরে কি যে কয়।
দিবাকর আজি দেরীতে উঠিছে কেন?
তবুও হৃদয় ডেকে ফিরে কারে যেন।
আবহমান
হাকিকুর রহমান 

দখিনা সমীরণে সাজিলো আজিকে
কাননের ফুল রেণুকা-
মাধবীর সুরে পূর্ণিমা রাতে
বাজিলো কোথায় বেণুকা।।
বাজিলো কোথায় কোন নদীতীরে
কোন সে উদাসীর বাঁশি,
জাগিলো কোথায় মেহগনি ছায়েতে
লইয়া পরাণ ভুলানো হাসি।
ঘুমে ঢুলুঢুলু লজ্জাবতী লতা
এখনও মেলেনি আঁখি,
ধীরে বহা নদী চলিয়াছে কোথা
স্রোতধারা পিছনে রাখি।
স্বপন আলোতে জাগিয়া রহিয়াছে
কপোত-কপোতী শাখে,
কল্পলোকেতে ভাসিয়া চলিয়াছে
সুর ধরিয়া কাহারে ডাকে।।
একটু প্রশান্তি
হাকিকুর রহমান 

অবশেষে,
সে বাতায়নে বসে,
একটু প্রশান্তির নিঃশ্বাস নেবার চেষ্টা করলো-
সমস্ত প্রান্তিক চাহিদাগুলোকে
সময়ের কাছে বন্ধক রেখে,
কোন এক দূরপাল্লার ট্রেনের সাথে
বিনা হুইসেল দিয়ে ছুটে চলার মতো করে,
চলতে চলতে হঠাৎ করে থেমে যাবে,
তারপর একটু জিড়িয়ে নেবে ঐ খোলা আঙ্গিনাতে-
যেখান থেকে দাওয়ার বাঁশের মাচার হাতলে ভর দিয়ে
খোলা আকাশটা দেখা যায়।
নীলাকাশ!
বহুদিন হলো ওদিকে তাকানোর ফুরসত হয়নিকো-
ভোর থেকে দুপুর গড়িয়ে, সাঁঝের বাতি জ্বালানো অবধি,
খড়ি কুড়িয়ে,
হেসেল ঠেলে,
জানালার মরচে পরিস্কার করে,
নলখাগড়ার ডালগুলো জড় করে,
সোয়ামীর গেঞ্জী থেকে ঝোলের দাঁগ ধুয়ে,
বড় ছেলের সার্টের বোতামটা লাগিয়ে,
ছোট মেয়ের জামার আস্তিনটা সেলাই করে....
যদিওবা একটু ফুরসত মিল্লো;
কোত্থেকে এক ঝড়ো কাক এসে
পোথেনে বসে ডাক শুরু করলো-
“একটু ক্ষুধার অন্ন চাই!”
নীড়
হাকিকুর রহমান 

নিরুপদ্রব অতিকায় দানবীয় শূন্য হাসি,
বড়ই কপটপূর্ণ সে হাসি-
যার মানে খুঁজে পাইনি আজো,
আর তা যেন, কবে কবে হয়ে গেছে বাসি।
ত্রিদিব না মর্ত,
তা নিয়ে ভাবার অবকাশ হয়নি কখনও-
শুষ্ক মরুদ্যানের পরিধিতে,
উদ্দেশ্যহীন আনাগোনা তখনও।
তমসায় ঘেরা নোনাজলে,
নিরুদ্রেক সন্তরণ-
এ যেন প্রাণহীন দেহেতে,
আবার হৃদয়ের উৎকরণ।
স্মৃতি বিহ্বলতা কাহারে হয়?
দেখি সারিবাধা কুহকের ভীড়,
নাকি পারিযায়ী পক্ষীকুলের
গোধূলিতে খুঁজে ফেরা নীড়।
ভাঙ্গা সাঁকো
হাকিকুর রহমান 

বুদ্ধি-শুদ্ধি নেইকো মোটেই
মুক্খু-শুক্খু মানুষ,
তেলেসমাতি দেখেই গেলুম
হলেম রঙিন ফানুস।
বাসি ফুলে ভরে আছে
সখের ফুলদানি,
কথার পিছে কথা বলা
নয়তো চাট্টিখানি।
একই প্রলাপ, একই বিলাপ
শুনি প্রতি প্রাতে,
ঘুম তাড়ুয়া চিন্তাগুলো
চেপে বসে রাতে।
দিন বদলের খবর খানি
রাখতে পারিনাকো,
এমনি করে যায় চলে দিন
যেন ভাঙ্গা সাঁকো।
ছড়াঃ ভূতের কেচ্ছা
হাকিকুর রহমান 

হাচ্ছো! হাচ্ছো!!
এই যে শোন খোকা খুকু
কেমন মজা পাচ্ছো?
আমড়াগাছের
দামড়া ভূতের কেচ্ছা শুনে
ভয়ে কি সব গাচ্ছো!
শেওড়াগাছের মগডালেতে
মামদো ভূতের বাসা তাতে,
ভর দুপুরে গাছের তলে
তোমরা কেন নাচ্ছো?
বাঁশবাগানের আঁধার পাঁকে
খ্যাংরা পেত্নী লুকিয়ে থাকে,
রাত বিরেতে ঘুমের ঘোরে
কেন সেথায় যাচ্ছো?
আগলে রেখে ঘরের দুয়ার
খেমতা আছে বাইরে যাবার,
দাদী-নানীর কেচ্ছা শুনে
ভিমরি কেন খাচ্ছো?
হাচ্ছো! হাচ্ছো!!

Thursday, July 16, 2020

Children
Hakikur Rahman


The child comes to light the house
Happiness is everywhere
Every heart of the house is touched
Every soul plays happily.
Day by day childhood-adolescence-youth
The ballad of success goes with the whole life.
Just like the wheel of life
This hope is for everyone
As if all the pictures are drawn.
প্রত্যাবর্তন
হাকিকুর রহমান 

স্বপ্নভঙ্গ হইল কি অবশেষে?
পাঠোদ্ধার করা গেলোনাতো, নিয়তির লিখন!
অতঃপর, নিদারুণ বাস্তবতার নিরিখেই ইতস্ততঃ বিচরণ।
আত্মার পরিশুদ্ধতায়, তাঁহাকেই স্মরিবার তরে,
নিরূপিত নিরুপন।
আদিষ্ট প্রাপ্তিতে,
আর নহে কোন অর্থহীন অতিক্রমন।
কি মোহে ডাকিয়া লয়!
সকলই অলীক, সকলই নশ্বর,
সকলই দিবাগত হইলে, ঢাকিবে নিবিড় নিশীথের আঁধারে-
কপটতার প্রলুব্ধতা আর নহে,
নহে আর, অনাবশ্যক হৃদয়ের রক্তক্ষরণ।
ওহে অবিনশ্বর!
ব্যাপ্তিত হও মম অন্তরে,
তোমাতেই নিঃশর্ত প্রত্যাবর্তন।
মেধার বিকাশ
হাকিকুর রহমান 

বিদ্যাপীঠের বিদ্যা নিতে,
দশ কেজির ব্যাগ পিঠে নিয়ে,
ছুটছে কোমলমতি শিশুরা-
বিদ্যাপীঠের সিঁড়ি ভাঙ্গতে যাচ্ছে পিঠটা বেঁকিয়ে,
করবে কি আর,
উপায়টাতো নেই।
খেয়ে-না-খেয়ে দিচ্ছে দৌড়,
আবার কোচিংএ-
অদ্ভুত এক শিক্ষাব্যবস্থার যাতাকলে পড়ে,
প্রাণ ত্রাহি ত্রাহি।
ক্ষণিকের সুখ পাচ্ছে,
জিপিএ ফাইভ, ইত্যাদি পেয়ে।
কিন্তু অবস্থা অতি ভিন্ন, উচ্চতর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে-
যেখানে বেশ কয়েক বছর পিছিয়ে পড়ে,
শিক্ষাজ্যাম-এর ফলে।
তারপর, পাশ করে অনেকেই বরণ করে
অভিশপ্ত বেকারত্বের জীবন-
আর মেধাবীরা, গত্যন্তর না পেয়ে দেশ ছাড়ে-
ফেরে না আর কোনদিন,
বংশ পরাক্রমে রয়ে যায় সেথায়,
দেশ পড়ে মেধার ঘাটতিতে।
আর, যারা রয়ে যায় দেশে,
তারা প্রতিনিয়ত শিকার হয়,
নানারূপ প্রতিবন্ধকতার-
এর থেকে উত্তরণের পথ আছে কি!
ফাগুন
হাকিকুর রহমান 

ফাগুন আসিলো ফিরে
ঝরা পাতার মর্মর ধ্বনি গেলো থামি,
দখিনা হাওয়ার পরতে পরতে শিহরিত প্রাণ
নীলাকাশ থেকে যেন অমৃতধারা আসিল নামি।
বনে বনে ফুটিলো অগনিত ফুল,
দৃষ্টি ভরালো শিমুল, পলাশ, বকুল।
কৃষ্ণচূড়ার রঙেতে, সাজিলো প্রকৃতি
রাঙিলো অধরা ধরা,
সেকি অপরূপ মোহনীয় লাগে
হলো যে হৃদয় ভরা।
কুলুকুলু রবে ধীরে বহে নদী
মোহিত করে দু’নয়ন,
বর্ণিত করিতে গর্বিত লাগে
সমৃদ্ধ হয় যে কবিতার চরণ।
চাওয়া
হাকিকুর রহমান 

সহস্রাব্দ কেটে যায়,
পদ্মায় কত জল গড়ায়,
হিসেবটাকি রাখে কেউ-
ক্ষণজন্মা এই জীবনে,
ভরা তো উত্থান আর পতনে,
বহে শুধু বেদনার ঢেউ।।
কালের সন্ধিক্ষণে আছি দাঁড়ায়ে,
অভিলাষী আশাতে দু’বাহু বাড়ায়ে।
সকলই তো ভর করে গতিহীনতায়-
হারায়ে গিয়েছে সকল অভিভাষণ,
বিলীন হয়েছে সকল প্রতিফলন,
হৃদয়ই কহিতে পারিবে, সে কাহারে চায়...
একদল জোনাকী
হাকিকুর রহমান 

একদল জোনাকী,
প্রাণের আকুতি দিয়ে, অতিশয় নীরবে
বাঁশ বাগানের আঁধারে আলো ছড়িয়ে দিয়ে বল্লো,
সারা পৃথিবীকে এমনি করে আলোকিত করার ইচ্ছে রইল-
একদল জোনাকী,
কোন ক্ষতিপূরণ ছাড়াই অভাগিনী মায়ের প্রদীপ নেভানো ঘরটাকে
আলোকিত করে রাখলো,
আবির রাঙানো রঙে, ভোর নাগাদ-
একদল জোনাকী,
অভিমান ভুলে দুখাইএর হেসেল ঘরের মাঁচার নিচে
জড় হলো, আর আলো দিয়ে চল্লো,
যতক্ষণ না উনুনের আগুন আবার নতুন করে জ্বালানো হয়-
একদল জোনাকী,
মেহগনি গাছের ফাঁক গলে, ফনিমনসার ঝাড়ে পড়া পূর্ণ শশীকে বল্লো,
ক্ষতি নেই, তুমি একটু বিশ্রামে যাও,
আমরাতো আছিই হেথা, ধরিত্রীরে আলোকিত করিবারে-
একদল জোনাকী,
একুশের প্রথম প্রহরে জেগে উঠে,
শহীদ মিনারের পাদদেশকে উদ্ভাসিত করেই জ্বল্লো,
আর কইলো, ঘুমাও তোমরা শান্তিতে,
রয়েছিতো আমরা তোমাদের চির প্রতির্ভ হয়ে-
একদল জোনাকী,
শত কোটি আলোক বর্ষ দূরে থাকা
নক্ষত্রগুলোকে সাথী করে,
সারারাত মিটিমিটি করে জ্বল্লো,
আর, হয়ে রইল মহাকালের স্বাক্ষী।
অতীত
হাকিকুর রহমান 

হায়রে স্তব্ধ অতীত,
নিকষ আঁধারে পতিত।
হৃদয়ে পশিলা মোর,
খুলিয়া রুদ্ধ দোর।
হায়রে নিরন্ন অতীত,
সামর্থ লুদ্ধ রহিত।
নীতি বাক্যে জীর্ণ,
অর্ধ শয়ানে শীর্ণ।
হায়রে অবলা অতীত,
নিঃশঙ্ক চিত্তে রচিত।
নিঃসংঙ্গ কোন দেবতার,
বিচ্যুতির অবতার।
হায়রে বিবর্ণ অতীত,
লব্ধি বহরা খচিত।
ভ্রান্তিবিলাসে আকীর্ণ,
বালখিল্যতায় জরাজীর্ণ।
নীলাম্বরী
হাকিকুর রহমান 

ওহে নীলাম্বরী পরিধেয়া,
হাঁটিছো তো ঘন বরষায়-
ফুটিছে কাননে কদম-কেয়া।
এসোহে সজল ঘন বাদল দিনে,
চিত্তে মম বাজিলো কি সুর-
নিতে পারিবো কি তাহারে চিনে।
সঘন মেঘেরা খেলিছে গগন চুমি,
পলকিয়া চাহি তাহাদের পানে-
নীচে দখিনা বাতাসে দুলিছে কাননভূমি।
চলিতেছো কোথা গুঁজে কুঞ্জলতা খোঁপার চুলে,
হেথা উদাস মনে রহিলাম বসি-
উছলি উঠে জলধারা বহতা নদীকুলে।
ছড়াঃ খুকুমনি
হাকিকুর রহমান 

আয়রে খুকু ঘরে আয়
মাঠে খেলে দখিন বায়,
সাতটা কাকে দাঁড় বায়
ধেড়ে শেয়াল কি গান গায়।
কুঁচে মুরগী নড়ে চড়ে
তিন গন্ডা ডিম পাড়ে,
টিনের ছাঁদে ঢিল পড়ে
ভয়েতে প্রাণ রয়না ধড়ে।
বুড়ো শকুন তাল গাছে
মাঠের দিকে চেয়ে আছে,
মরা গরু নেইতো কাছে
খেতে হবে শাঁকে মাছে।
ঝিকু ঝিকু রেলের গাড়ি
যাবা নাকি মামার বাড়ি,
খেতে পাবা রসের হাড়ি
নেইতো কোন কাড়া কাড়ি।
পরিপাটি করো কেশ
লাগবে তাতে আরও বেশ,
কথার আমার রইল রেশ
ঘ্যাচাং করে হইল শেষ!
মনুষ্যত্ব
হাকিকুর রহমান 

পাত্র-মিত্র, গোত্রের বিবেধ ভুলি,
মনুষ্যত্বকে সবার উপরে তুলি।
সিঞ্চিত করি তপ্ত ধরাকে
গাহি সাম্যের গান,
বহিত হউক শান্তির সুবাতাস
জাগরিত হউক প্রাণ।
উন্নীত করি চিন্তা-চেতনা
বাড়াই সহযোগিতার হাত,
হৃদয়ে জ্বালি অহিংসার আলো
সফলতায় ভরুক প্রতি প্রাত।
সমৃদ্ধি করি প্রতিটি অন্তর
আসুক ধরাতে শান্তি,
সহমর্মিতায় ভরুক চারিদিক
ঘুঁচাক সকল বিভ্রান্তি।
প্রকৃতি
হাকিকুর রহমান 

হঠাৎ হাওয়ার দোলায়
দুলে উঠলো ঢ্যাপের ফুলটা-
আকাশী নীল শাড়ি পরা মেয়েটা এসে,
দু’হাত দিয়ে টেনে উঠিয়ে নিয়ে যাবে ওকে,
ভর দুপুর পেরুনোর আগেই খাবার হয়ে যাবে সে।
মালতীগাঁও থেকে এসেছে
কতগুলো ছেলে-বুড়ো, গ্রাম উজাড় করে,
তারাও যে যার মতো ঝাঁপিয়ে পড়েছে ঝিলের জলে,
পোনা, টাকি, শোল, খলসে
যাকিছু আছে, আজকে লোপাট হবে,
মেঘের ক্রোধ গর্জে ওঠার আগেই সব শুনশান।
নলখাগড়ার ডালে ঝুলে থাকা
মাছরাঙ্গাটাও প্রমাদ গোনে-
রাতের খাবারের তরে কিছু রইল না আর বাকি।
ওদিকে অবহেলায় পড়ে থাকা কাকড়াগুলো,
শুকনো দীর্ঘশ্বাস ফেলে চায় গগনের পানে,
আর কয়, “একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে চাই!”
জলের কন্যা
হাকিকুর রহমান

জলের কন্যা চলিছে গেহতে
সিনান করিবার পরে,
স্নিগ্ধ ছায়াবীথি তাই চেয়ে রয়
তাহারে হেরিবার তরে।
মাতাল বাতাস ঘুরিছে সেথায়
ছড়ায়ে শরীরের ঘ্রাণ,
রূপার নূপুর পায়েতে বাজিছে
জুড়ায়ে যায় মন-প্রাণ।
কাজল মেখেছে দুই নয়নে
খোঁপাতে গুঁজেছে ফুল,
আলতা রাঙানো পায়েতে চলিছে
কানেতে দিয়েছে দুল।
নয়নে ভরেছে কোন ফটিকজল
কতনা গভীর মায়া,
ডাহুক-ডাহুকী গাহিয়া ফিরিছে
সোনা রং ভরা কায়া।
হাতছানি
হাকিকুর রহমান

গহন অরণ্য হাতছানি দিয়া ডাকে,
পাতায় পাতায় ভরা তরুলতায়
কি মায়া জড়ানো থাকে।
শুকনো পাতার মর্মর ধ্বনি
বেজে উঠে কোন সুরে,
হিজল, তমাল, শালের ছায়াতে
ডেকে নেয় সেই দূরে।
আঁকা বাঁকা সরু পথগুলো
মিশে গেছে ঐ সীমানায়,
ছায়াবীথি ঘেরা সবুজ বনানী
ডাকে তবু কোন ইসারায়।
ঘাসের শিশির পায়েতে জড়ায়ে
তবু হেঁটে চলে যাই,
রংধনু এসে হৃদয় ভরালো
তারই পানে ফিরে চাই।
বিদায় ঘন্টা
হাকিকুর রহমান

হঠাৎ করে বেজে উঠলো বিদায় ঘন্টা,
কে বা কারা যেন চিরতরে হারিয়ে যাবে
তার আগাম বার্তা জানালো।
ঐ যে আকাশে একাকী উড়ে চলা চিলটা,
নাকি তালগাছের মাথায় গুমরে বসে থাকা বুড়ো শকুনটা,
নাকি অন্তরের মাঝখানে সাজিয়ে রাখা স্মৃতিগুলো।
গাছের ছায়ে দাঁড়িয়ে দেখি,
পুরো পৃথিবীটাই আবার নতুন করে ঘুরে উঠলো,
আর নিউটনের তৃতীয় সূত্রমতে-
প্রত্যেক ক্রিয়ারই সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়ার মতো,
কর্মকান্ডগুলো নড়ে চড়ে উঠলো।
আবার হঠাৎ করে,
বাতাস, মেঘ, রৌদ্র, বৃষ্টি, ঝড়,
সব মিলেমিশে একাকার হলো।
আর গলির মোড়ে দাঁড়ানো,
শীর্ণকায় ক্ষুধার্ত শিশুটা কেঁদে উঠে বলে উঠলো-
“এক মুঠো অন্ন চাই!”
কে জানি
হাকিকুর রহমান
জ্যোৎস্না উধাও হলো,
সাথে করে নিয়ে গেলো তমসাকে-
বালি ঝুমকোটা কে জানি কানে চড়ালো,
শূন্য হাসি হেসে,
ভীরুপায়ে কে এসে দাঁড়ালো চৌকাঠের কোণে।
রূপালী চাঁদ,
সেতো চিত্রকরের ক্যানভাসেই শোভা পায়।
ন্যাড়া বেলতলায়, কিম্বা দারুচিনি বনের ধাঁরে,
কেউ কি কারো জন্যে অপেক্ষায় থাকে?
ঠুনকো যুক্তি দিয়ে,
কিসের স্মৃতিকে ধরে রাখা!
ওদিকে শানকিতে, জল ঢালা ভাতগুলো
লেজকাটা কুকুরটা লোপাট করে দিলো,
আর আমি তমসার নীচে দাঁড়িয়ে,
সেক্সপিয়ারের গীতিকাব্য আউড়িয়ে ফিরি।