Saturday, July 17, 2021

 

হৃদয়ে রাখিলো কে!
হাকিকুর রহমান 
 
বৃষ্টির জলে ফুটিলো বেলিফুল
উড়িলো গগনে মেঘের কালো চুল
শিওরে জ্বালিয়ে নিভু নিভু দীপ
আঙ্গনে জাগিলো কে!
স্মৃতির মিনারে ছড়ালো কেতকী
আষাঢ়ের ঢলে গাহিলো চাতকী
আঁখিবারি চাপি নিশীথ জাগিয়া
কাছেতে ডাকিলো কে!
হেলাফেলা করে কাটিলো যে বেলা
বসুধার তীরে ভাঙ্গিলো যে খেলা
ঘন ঘোর রাতে লহরী ছাপিয়া
তরীটি বাহিলো কে!
ভাঙ্গা-গড়া সবই হইল যে সাথী
কোন সে কুলক্ষণে নিভিলো যে বাতি
তনুমন ঘিরি আলোক ব্যাপিয়া
হৃদয়ে রাখিলো কে!

 

Words
Hakikur Rahman 
 
By you, by me
By the sky, by the wind
By the sound of fallen leaves
By the shadow of broken dreams
By the past days, by the infinite future
By the affection to you
By the smile of yours;
Never allow to drop my words on the soil.

 

ছড়াঃ জামাই
হাকিকুর রহমান 
 
কে এসেছে, কে এসেছে
জামাই এসেছে
শীতল পাটি বিছিয়ে দিছি
জুড়ে বসেছে।
জামাই এলো টোপর মাথায়
ঘুঘু ডাকে চালের বাতায়।
আয়রে ভতু, আয়রে নতু
দেখবি এসে জামাই,
পাঠশালাতে যায়নি যে কেউ
সব করেছে কামাই।
পালকি থেকে নামল জামাই
বড় খানকা ঘরে
হুমড়ি খেয়ে পড়লো সবাই
একটু দেখার তরে।
বাজছে কত বাদ্য যে আজ
বাজছে কত ঢোল
ফাটবে বোধহয় কানের তালা
বেজায় গন্ডগোল।
কেউ শোনেনা কোনও কথা
সবাই ওঠে মেতে
কলার পাতা বিছিয়ে দিয়ে
বসলো সবাই খেতে।
এমন করেই আগের দিনে
বিয়ে হতো সারা
এখন সবই হারিয়ে গেছে
ভুলেই গেছে ধারা।
(গ্রাম বাংলার পুরোনো ঐতিহ্যকে
একটু স্মরণ করলাম।)

 

পুলকিত অনুক্ষণ
হাকিকুর রহমান 
 
খুলিয়া পরান, গাহিতেছি গান
কাটিবে কি ঘণঘোর
সুললিত সুরে, ডাকিলো কে দূরে
পশিলো প্রাণেতে মোর।
চপলা চাহুনি, বন হরিণী
নাচিয়া চলিছে কোথা
গোমতীর ধাঁরে, নব অভিসারে
সকলে ছুটিছে হোথা।
সুরভিত ক্ষণে, বিচলিত মনে
কাহারে ডাকিয়া ফিরি
আবেগিত ছলে, নয়নের জলে
ঢাঁকিলো আঁধার ঘিরি।
ভরিয়া গাগরী, চলিছে নাগরী
চমকিত বেনুবন
পাপিয়া গাহিছে, চাতকী চাহিছে
পুলকিত অনুক্ষণ।

Friday, July 16, 2021

 

ছড়াঃ যায় যে বেলা
হাকিকুর রহমান 
 
আয়রে খোকন সোনার বদন
মা বলে, চাঁন, মানিক, রতন
দুধ কলা দে’ খাবি রে ভাত
পিড়িটাকে জলদি রে পাত।
হুলো বেড়াল ওই যে বসা
যদিও সে কানে ঠসা
পাতের আহার নেবে কেড়ে
মিয়াও বলে লেজটা নেড়ে।
জলদি করে খারে সোনা
বাজার করে আনলো পোনা
কাটতে হবে হেশেল ঘরে
রাঁধতে হবে উনুন ধরে।
আসছে সবাই খাবার চাই
দেরী হলে রক্ষে নাই
তাইতো বলি নেরে খেয়ে
বেলাটাযে যাচ্ছে ধেঁয়ে।

 

ছড়াঃ বাঁচার আশা
হাকিকুর রহমান 
 
আবোল তাবোল বকছি বেজায়
মাথায় নাকি হলো দোষ,
বাড়িতে নেই সওদাপাতি
গিন্নি করে উঠেন ফোস।
“আমড়া কাঠের ঢেকি” হয়ে
কাটিয়ে দিলাম সারাটা কাল,
যেমন কম্ম তেমন ফলে
হচ্ছি এখন বেজায় নাকাল।
হাতের পাতের যা ছিলো সব
ভেঙেচুরে খেয়ে ফেলে,
মনের জ্বালায় খেই হারিয়ে
কইছি শুধু এলেবেলে।
রাংতা দিয়ে গড়া পুতুল
টিকবে কি আর বেশিদিন,
রইছি বসে “ঘাটের মরা”
বাঁচার আশা হ’লো ক্ষীণ।

 

Testimony
Hakikur Rahman 
 
"Shining doesn't make something gold"
The cuckoo lay their eggs at the crow's house.
Coal dirt cannot be washed away using water
Knowledge never been forgotten.
It never feels good to forget something special
In the shadowy existence there is no hope of life.
However, the entire life is spent at the seashore
The account book of life never matches.
The jeweler only knows what is the pure gold
There are only a few conscientious people in the society.
There are many twists and turns in the way of life
Even, someone is calling again to move forward.

 

বেশ আছি কাছাকাছি
হাকিকুর রহমান 
 
বেশ আছি, সুখেই আছি,
বেদনার সরোবরে ডুবেই আছি-
বহু স্বপনের স্বাক্ষী হয়ে,
নিদ্রাহীন জেগেই আছি,
অনেক খরার মাঝে,
নতুন খরা হয়ে বেঁচে আছি-
ঘাসফুলগুলোর সঙ্গী হয়ে,
শিশিরের মাঝে বেশ আছি,
কাছাকাছি,
সাগর বেলার বালুচরের কাছাকাছি।
রঙিন রুমালের আল্পনা হয়ে,
আঁকাবাঁকা চোখে চেয়ে আছি-
বুনো জাঙ্গলার আগাছা হয়ে,
নলখাগড়ার ডালে ঝুলে আছি,
অপমানিত হবার আগেই,
লজ্জা ঢেঁকে নিয়ে দূরে আছি-
ঘন মেঘের আচ্ছাদনে,
নিজেরে লুকিয়ে রেখে জেগে আছি,
কাছাকাছি,
তবুও বেদনার স্রোতে ভেসে আছি, কাছাকাছি।
আকাশের উসকো খুসকো চুলে,
বিলি দেবার তরে সেজে আছি-
পাতার ফাঁক দিয়ে গলে আসা,
একটু আলো দেখার তরে বসে আছি,
কাছাকাছি,
না বলা কথাগুলোর অতিশয় কাছাকাছি।

 

অবিশ্রান্ত স্মরণী
হাকিকুর রহমান 
 
অস্তিত্বের চোয়ালে
হঠাৎ করে প্রচন্ড ধাক্কা খেলাম-
কে যেনো আমার
প্রকাশের স্বাধীনতাটাকে কেড়ে নিতে চাইলো,
আর আমি উদ্বাস্তুর মতো নিলিপ্ত চেয়ে রইলাম;
এমনিতেই আপনার মধ্যেই পরবাস,
তার উপর প্রকাশহীনতার দেউড়ি।
হ্যা, ভুগেছি বহু বছর
এই নির্লিপ্ততার লেবাসে নিজেকে জড়িয়ে রেখে-
দূর থেকে কে যেনো প্রতিদিন অতি তীক্ষ্ণ স্বরে
চিৎকার করে বলেছে-
জাগো, জাগো হে!
ঘুমহীন প্রাতের
নির্ঘুম রাতের সঙ্গী হওয়া আর কতকাল?
পা দু’টো তো অসাড় হয়ে যাবে,
না পদচারণার ফলে-
হোক না তা বিক্ষিপ্ত, তবুও প্রচেষ্টারত হও
পেজা পেজা মেঘের মতো,
শ্রাবণে ভেজা পিচ্ছিল পথের মতো,
উটপাখির পালকের মতো-
হতে পারে পথটা, কিছুটা ছড়ানো ছেটানো
কিছুটা পিচ্ছিল, কিছুটা মসৃণ-
তবুও প্রচেষ্টারত হও।
আর আমি, একটু তৎপর হলাম
ভেজা কাকটা যেমন ঝাড়া মেরে উঠে-
আবার আমি পথের এক প্রান্তে এসে দাঁড়ালাম।
হোক না তা একেবারে শেষে, কিংবা না হয়
অতিক্রান্ত পথেই
হোকনা নতুন করে পরিক্রমা।
ক্লান্তিতো অত সহজেই হার মানাতে পারবেনা আর,
এই অবিশ্রান্ত স্মরণীর সীমারেখায়।
(লেখাটা জীবন থেকে নেয়া। এখানে কোনও
প্রকার রাজনৈতিক বক্তব্য নেই।
ধৈর্য ধরে লেখাটা পড়ার জন্যে অশেষ ধন্যবাদ)

 

ছড়াক্কা
হাকিকুর রহমান 
 
ছড়ার উপর ছড়া, লাইগছে বিজায় চড়া
ছড়ার বুকির মদ্দিখানে কইরচে লড়াচড়া।।
পানসি নাওয়ে চইড়ে, কে যে দিলো বইড়ে
ছাদের উপর হোগলা পাতা, ওতেই হইবে খড়া।।
কাদের আলী খামখেয়ালি, লিকলো ছড়া হালি হালি-
এ্যাকন আমি কেমনি কইরে, ভাযি ডাইলের বড়া।।
নুন আইনতে পান্তা তো শেষ
সাদের খাওয়া লেইগলো তো বেশ।
রাযায় রাযায় যুদ্দু করে, ফকিন্নিটা কেইন্দে মরে
ধোঢ়া সাপে দিইলো কেইটে, দাত বসায়ে কড়া।।
ছড়ার উপর ছড়া, লাইগছে বিজায় চড়া।
(বইড়ে- দাবার চাল, খড়া- খড়ি)

 

আমাতেই বিলীন
হাকিকুর রহমান 
 
অপ্রচ্ছন্নতার মাঝেই বসবাস,
তবুও মাঝে মাঝে একটু প্রচ্ছন্নতার প্রলেপ মাখিয়ে নেয়া-
যদিওবা তা ভ্যানিশিং ক্রিমের মত ক্রমাগত উবে যায়,
তারপরও নিজেকে প্রচ্ছন্ন রাখার কি নিদারুণ প্রয়াস!
যত্রতত্র খানাখন্দে ভরা জীবনের রাস্তাটা,
তার মাঝেই হাঁটা, চলাফেরা, ঘুম, নির্ঘুম, অশান্তি, প্রশান্তির ব্যাপকতা।
আবার সরীসৃপের মতোই পা ছাড়া হেঁটে বেড়ানো,
আহা! কি যে পরিতৃপ্তি,
এই একই জীবনের খানিকটা ছেঁড়া অংশ নিয়ে
যদিওবা ওই একটু দূরেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে মহাকাল।
কি বিভক্তি! প্রতি পদক্ষেপই যেনো নিক্তিতে মেপে নেওয়া,
তবুও সংকোচ, সংশয়, দ্বিধার সমন্বয় ঘটেই চলেছে-
আর অতঃপর কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে নির্বাক চেয়ে থাকা।
আমি কি-
আমাতেই বিলীন হতে পেরেছি কখনো?

 

মায়ের পাদুকা
হাকিকুর রহমান 
 
আমার মায়ের পাদুকা দু’খানা
দেখেছোকি তোমরা কেউ?
পাদুকা দু’টিকে ভাসিয়ে নিয়েছে
ভরা বরোষার ঢেউ!
পাদুকা দু’টি বড়ই শীর্ণ
পরে বেড়ান এখানে সেখানে,
চালাঘর থেকে হেসেল পেরিয়ে
কখনও যান তিনি উঠানে।
নতুন পাদুকা কিনে দেবো যে
যাওয়াতো হয়নি হাটে,
ওদু’টি পরেই, মা আমার
চলেন গাঁয়ের পথে ঘাটে।
খেয়াল করিনি, কবে কবে ওদের
তলিদু’টো গিয়েছে ছিঁড়ে,
তবুওতো মা, পরে বেড়ান ওদু’টি
অনেক লোকের ভিড়ে।
কবে যে কিনেছি পাদুকা দু’খানা
নেইকো তা আর মনে,
হয়েছে যে তারা বড়ই জীর্ণ
কইবো বা কার সনে।
ওদু’টি নিয়েই চলেন তিনি
কখনও দেননি নালিশ,
আমি হতভাগা ভুলে গেছি তা
কিনি আমি মাথার বালিশ।
আমার মায়ের পাদুকা দু’খানা
থাকুকনা আমার মাথে,
খুঁজেতো তাদের পেতেই হবে
আষাঢ়ের বরোষাতে।

 

করিৎকর্মা
হাকিকুর রহমান 
 
কেঁচো ডাকি কহে,
মাটির তলানিকে
অতি কর্দমাক্ত তুমি বটে,
গাত্রের রংটাও অতিশয় ফিঁকে।
মাটি হাস্য করি কহে,
ওহে অ্যানিলিডা
স্বীকার করি তুমি অতি করিৎকর্মা-
“কৃষকের বন্ধু”
তবুও, খেয়ালে রাখো,
আমি বিনা তুমি কিডা।
(কিডা- কে)

 

অনুক্ষণ
হাকিকুর রহমান 
 
পাখ-পাখালি গাইলো যে গান
কুঞ্জলতার শাখায় দুলে
রঙ্গিলা নাও ভাসছে দূরে
থামবে সে যে অচিন কূলে।
শাপলা ফুলের ঢ্যাপর তুলে
খুকুমণি খাচ্ছে দেখো
বনের ধারে কাঠবেড়ালি
বলছে তারে একটু রেখো।
ধানশালিকের আনাগোনা
চলছে সারা মাঠে
গুটিপোকা খুঁজেই চাষার
সারাটা দিন কাটে।
সুরে সুরে গাইছে শোনো
ঘরছাড়া বিবাগী
সারাজনম এমনি করে
কাঁদে যে কার লাগি।
বাঁশের বাঁশি বাজিয়ে রাখাল
রইছে গাছের ছায়
রঙিন শাড়ির উড়িয়ে আঁচল
বউটি হেঁটে যায়।
ছন্নছাড়া দিনগুলো সব
উদাস করে মন
কালগুলো তাই হৃদয় মাঝে
রইলো অনুক্ষণ।

 

চৈতী চাঁদের আলো
হাকিকুর রহমান 
 
লাগলো চোখে চৈতী চাঁদের আলো
ঘুম ভাঙিয়ে ডাকলো কাছে লাগলো বড়ই ভালো।।
প্রদীপ, সেতো নিভিয়েছি বহু আগে
তন্দ্রাহারা দু’টি আঁখি চাঁদের সাথে রাত্রি জাগে।
কোন বিরহী বাজায় বাঁশি ঐ দূরে
আলোড়িত প্রাণ কেড়ে নেয় সেই সুরে।
বুলবুলিটা ডাকছে শাখে অবিরত
বাঁধনহারা দিন পড়ে রয় অনাগত।

 

ভাবনা
হাকিকুর রহমান 
 
আদ্যপান্ত শুনে-
চমকিয়া উঠি,
এ সমাজকে ধরেছে আজ ঘুনে।
করিয়া ঈষৎ নাব্য-
ভাবিলাম মনে,
শুনিবোনা আর এসব অশ্রাব্য।
বন্ধ করিয়া আঁখি,
ভাবনার দ্বারে বসে থাকি।
দুই কানে দুই হস্ত,
ঘটুক ঘটনা সমস্ত।
বাঁধন দিলেম মুখে,
রহিবো লইয়া চিত্ত, মহাসুখে।
সম্বিত ফিরিয়া দেখি,
সকলি গরল ভেল, সকলি মেকি।
তাই যাহা প্রাণে চায়,
লিখে গেনু কবিতায়।

 

রিক্সাওয়ালা
হাকিকুর রহমান 
 
চাকা ঘোরে পায়ের জোরে
ঝরে গায়ের ঘাম
সারাটা দিন খেটেই চলে
পায় সে কি তার দাম।
এখান থেকে ওখানে যায়
রোদ বৃষ্টি ঝড়ে
ওষ্ঠাগত হয়ে যে প্রাণ
থাকেনা আর ধড়ে।
তবুও চলা এই পথে যে
বাঁচার প্রেরনায়
যাওয়া আসার পথের সাথী
নেই কারো করুণায়।