Sunday, May 16, 2021

 

আত্মসমর্পণ
হাকিকুর রহমান
অন্তকরণে করিয়া অভিব্যক্তি
দ্বিধাদ্বন্দে থাকে সকল প্রাপ্তি।
লগ্ন সেতো অতিশয় অপরিসীম
ক্ষণকালও লাগে যেনো অসীম।
লক্ষ্যে পৌঁছিবার তরে পদচারণা
সম্যক আনিয়া সকল ধ্যানধারণা।
প্রয়াস চলে তবু অহর্নিশি
ভাবনার অতলে যায় মিশি।
বোধগম্য হয়না কোনও সমীকরণ
অতঃপর উপলব্ধির নিকটেই আত্মসমর্পণ।

 

ছড়া- মামদো ভূত
হাকিকুর রহমান
শ্যাওড়া গাছের মামদো ভূত
চাপলো এসে ঘাড়ে,
আষ্টেপিষ্টে চেপে ধরে
প্রাণটা বোধহয় কাড়ে।
বলে ব্যাটা, সাঁঝ বেলাতে
গেছিস্ গাছের নিচে,
মুন্ডুটাকে উল্টোদিকে
দেবো এবার খিচে।
আশে পাশে নেইতো যে কেউ
ডাকবো কারে ভাই,
এমন ভূতের কবজি থেকে
বাঁচার উপায় নাই।
চিল্লাবোযে জোরে শোরে
মুখ চেপেছে ধরে,
প্রাণ বায়ুটা উধাও হবে
আছি একোন ঘোরে।
তাইতো বলি সাঁঝ বেলাতে
হোথায় যেওনাকো,
অনেক সাঁধের প্রাণটা তোমার
মিছেই খুয়োনাকো।

 

A poor soul
Hakikur Rahman
A poor soul, asked the eternity-
Can you tell me,
Where is my destiny?
The eternity jingled, mingled
Laughed, puffed
And said, why should I tell you,
In comparison to me
You are so tiny!
The poor soul, finding the response
Cried a lot, but silently
And asked thyself
For an appropriate answer-
Later on realized
The cruelty of fate,
And, thereafter
Remained silent forever.

 

কুটুম বাড়ি
হাকিকুর রহমান
উল্লাপাড়ার কুটুম বাড়ি গেলাম বেড়াতে-
কুচো মাছের চচ্চড়ি আর কাতলা মাছের মুড়ি ঘন্ট,
আরও কত পদের খানা
তাইতো আমি চাইনি এড়াতে।
বাড়ি তো নয়
এ যেনো এক ছবি দিয়ে মোড়া,
উঠোন, পতেন, হেসেল দেখে
হলো যে চোখ জোড়া।
হাজার বিঘে ধানের জমি
তিনটে আছে মস্ত বড় দীঘি,
তিন ডজন গাভীন গরু
বাসায় পাতেন হাতে তোলা ঘি।
সবজি ক্ষেতে গাজর ভরা
লাউ, পটল, কুমড়ো- আরও কত কি,
বাড়ি আছেন গিন্নী পাকা
সেও জানি বড় লোকের ঝি।
কন্যাটিও সুন্দরী বেশ
চোখ দু’টো ঠিক যেন পটল চেরা,
মহাসুখেই চলছে যে দিন
সবই যেন স্বপ্ন দিয়ে ঘেরা।

 

উপক্রমণিকা
হাকিকুর রহমান
জ্বালিয়ে জ্ঞানের শিখা
পুনরায় উপক্রমণিকা।
বাড়িয়ে জীবনের পরিধি
গতিময়তা সমুখের পানে
যবনিকাপাত অবধি।
মেলিয়া চেতনার পরিসীমা
সঞ্চিত করি প্রাণের সুধা
ভরে থাক তারুণ্যের অরুণিমা।
ভুলিয়া সকল ক্লান্তি
গড়ি নিজেকে সমৃদ্ধির পথে
মনেতে আনি প্রশান্তি।
উঠায়ে দিয়ে দু’হাত
উজ্জীবিত করি চেতনার বাণী
আর নহে অভিসম্পাত।

 

স্মৃতির অবগাহন
হাকিকুর রহমান
স্মৃতির অবগাহনে
কি ক্লান্তি আনে দেহ-মনে
ছাড়িয়া দীর্ঘনিঃশ্বাস
করে যায় মোরে পরিহাস
আশাগুলি সব ভূলুন্ঠিত হয়
অসচ্ছতার সমীকরণে।।
আসল-নকলের মাঝে
চলা-ফেরা বিনাকাজে
অনাগত ভবিষ্যৎ
নানা মুনির নানামত
প্রচ্ছন্নতায় ঘিরে আছে সবই
কি কথা হৃদয়ে বাজে।।
অসময়ে দাঁড় বাঁধা
এলোমেলো সব ধাঁধা
শক্ত করিয়া বসি
হালটাকে ধরি কষি
এযেনো আবার নতুন করিয়া
পুরাতন সুরে সাধা।।

 

কড়চা
হাকিকুর রহমান
জ্ঞানীর কথা বুঝতে হলে
জ্ঞান থাকা জরুরী,
আদালতে থাকলে বসে
যায়না হওয়া মহুরী।
পানির তলে থেকেও তবু
যায়না হওয়া মাছ,
গভীর বনে থাকলে বসে
হয়না বসবাস।
ঘ্যানর ঘ্যানর করেও তবু
যায়না দেয়া নালিশ,
পাঁচ মাথায় বসলে পরে
হয়না সেটা সালিশ।
একমাত্র জহুরীই চেনে
কোনটা খাঁটি সোনা,
বোঝার যেজন, বোঝে সেজন
সেতো হাতে গোনা।

 

ছড়া- দোলা
হাকিকুর রহমান
শিশু দোলে মায়ের কোলে
বানর দোলে গাছে,
নলখাগড়ায় ফড়িং দোলে
আহ্লাদেতে আছে।
দোলায় দোলে খোকা-খুকু
ময়না দোলে খাঁচায়,
বিলের জলে পদ্ম দোলে
ভোমরাটারে নাচায়।
বঁধু দোলে পালকি চড়ে
হাঙ্গর দোলে জলে,
সদ্য হওয়া বকন দোলে
আমড়া গাছের তলে....

 

সময়ের অনুগত দাস
হাকিকুর রহমান
রাত্তিরের কোলে
চন্দ্রালোক দোলে,
কোন সে ভবঘুরে
হেঁটে যায় পথে
কার কিইবা যায় আসে তাতে-
নিয়তির দ্বারে
তুমি
আমি
সে
কারও কোনও অগ্রাধিকার নেই-
সকলেই তো
সময়ের অনুগত দাস।

 

মিনতি মোর
হাকিকুর রহমান
কহো, কহো, ওহে কহিয়া যাও
এ রহে মিনতি মোর-
বহো, বহো, তুহে বহিয়া যাও
খুলে দিয়ে প্রীতি ডোর।।
ছাড়িয়া নিদ্রা, ভেবেছিনু যবে
সাথে যাবো তব সঙ্গে,
মাঝপথে হেরি, হইলো যে দেরী
কাটিলো যে কাল রঙ্গে।
খুলিয়া নেত্র, চেয়েছিযে পিছে
পাইনিতো কোনও চিহ্ন,
সারাপথ জুড়ে, দিয়ে গড়াগড়ি
বুকেতে বেঁধেছি বিহ্ন।
তবুও কাঁদি হে, পথপানে চাহি
ফিরিবেক কোনও ক্ষণে,
ভাবিতে পারিনে, হারায়ে গিয়াছো
তবু গাহি আনমনে।

 

আবেগের ভূত
হাকিকুর রহমান
আবেগের ভূত
নামেনাতো ঘাড় থেকে,
রাত-বিরেতের বালাই তো নেই
অনবরত যায় ডেকে।
হুতাশ পরাণ
থমকিয়া গেলো পথে,
চকিত চরণে পিছু ফিরি চাই
তবু চলা কোনও মতে।
কাহারে ডাকিয়া কি কহি
বেদনা সকলই যাই সহি।
নিদেনের কালে
দাঁড়ালোনা এসে কেউ কাছে,
গরলের ভালে
রইলো যে পড়ে সব পাছে।

 

সঞ্চারিত ধন
হাকিকুর রহমান
আছে কিছু মোর সঞ্চারিত ধন
রেখেছি তা অতি যতনে,
চাহিবোনা সেগুলি দেখুক দিবালোক
রয়ে যাক তা গভীর গোপনে।।
দিবসের আলো মিটিবার আগে
হেরিবারে তারে বড় সাঁধ জাগে-
আশার অতীত উবিয়া গেলো কোথা
খুঁজে ফিরি তা নিভৃত স্বপনে।।
ভাবনার দ্বার খুলিয়া দিয়াছি
অভিলাষী মন রাঙিয়া নিয়াছি-
থাকুক সে গুলি হৃদয় মাঝারে
বিচরণ করুক নীরব চরণে।।
মরমের কথা কহিবো যে কারে
স্বপন রাতিতে হারিয়েছি যে তারে-
বিরান স্মৃতিরা ঘুরিয়া মরিছে
বিচলিত করে সে কিছু স্মরণে।।

 

অমরত্ব চাইনি
হাকিকুর রহমান
অমরত্ব চাইনিকো কভু,
শুধু এক চিলতে চাঁদের আলোতে
বেঁচে থাকার আকুতি রইলো
মহাকালের কাছে-
পূর্ণতার পানে যাত্রা করতে
পারিনিকো কভু,
নৈবেদ্যর থালি হাতে
চাঞ্চল্যহীন বহমানতায় সন্তুষ্ট রইলাম,
ক্ষণকালই হ’লো আজন্ম সহোদর-
জন্ম-মৃত্যুর খেলায় বন্দী হয়ে
জীবনের পুনর্বিন্যাস খুঁজে ফেরা,
কন্ঠনালী পর্যন্ত ডোবাজলে
অপেক্ষমান নিরন্তর,
না কিছু পাওয়ার আশাতে-
পূর্ববর্তী সংকেত কি ছিলো
জানা নেই,
পরবর্তী সংকেতই বা কি
তাও জানা হয়নি যে-
মূর্খ অবিশ্বাসের পিছনেই
গতিপথটা গেলো যে মিশে,
আর, দৈবাৎকে সাথে নিয়েই
পুনরায় অতি সামান্য
সময়ের তরে, পিছু অভিযাত্রা ....

 

অবিনশ্বরের পদতলে
হাকিকুর রহমান
কবে যেনো নিজেকে একেবারেই হারিয়ে ফেলেছিলাম,
কবে যেনো আকাশটা গিয়েছিলো ঢেঁকে ঘণ কালো মেঘে,
কবে যেনো নিঃশেষিত হয়ে গিয়েছিলো মরুদ্যানের ক্ষুদ্র জলাধারটা,
কবে যেনো স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে গিয়েছিলো হতাশার চিহ্নগুলো,
কবে যেনো ঝরেছিলো এক পশলা বৃষ্টি চৈত্রের রোদের বুক চিরে,...
কবে যেনো পূর্ণ জোসনায় চাঁদটা উঁকি দিতে ভুলে গিয়েছিলো
দারুচিনি গাছটার ফাঁক দিয়ে,
কবে যেনো কে হেঁটে গিয়েছিলো মৌন পায়ে পৌষের
ঝরা পাতার মর্মরে,
কবে যেনো কে গেয়ে ফিরেছিলো কোন সে চেনা সুর ধরে
অচিন গাঁয়ের পথ বেয়ে,
কবে যেনো কে অস্ফুট স্বরে কি কথা কয়েছিলো
যদিওবা সেটা বুঝতে পারেনি কেউ কখনও,
কবে যেনো কে বঁধুয়ার বেশে আলতা রাঙা পায়ে
পালকীতে চড়ে গিয়েছিলো কোন সুদূর গাঁয়ে
যদিওবা কেউ তার খবর আর রাখেনি,....
তবুওতো পৃথিবীটা ঘুরেই চলেছে তার কক্ষপথে
যদিওবা শত-সহস্র-লক্ষ-কোটি বছর পরে
হয়তোবা থেমে যাবে চিরতরে,
কারণ, অন্য সব কিছুর মতো সেওতো নিতান্তই নশ্বর,
আর তাই, বিলীন হয়ে যাবে অবিনশ্বরের পদতলে।

মায়ার টান
হাকিকুর রহমান

অনুনয় করিবেনা কেহ হাতখানি ধরে
ডাকিবেনা কাছে কেহ বেঁধে প্রীতি ডোরে।
বসিয়া রহিবেনা কেহ বাতায়ন পাশে
কহিবেনা কথা কেহ হৃদয়ের আশে।
ভরিয়া রহিবে কি ক্ষণগুলি হুতাসনে
ঝরিয়া পড়িবে কি বকুল, শূন্য আঙনে।
কাঁদিয়া ফিরিবেকি বঁধু ভগ্ন হিয়ায়
আঁধারে রহিবে কি কেহ, নিভানো দিয়ায়।
কহিবেনা কেহ বিগলিত সুরে, ওহে প্রিয়া
ভাসিবে কি আঁখি, দু’নয়নের জল দিয়া।
শুনাবেনা কেহ, কাতর কন্ঠে কারও গান
বুঝিবেনা কেহ, জগৎ সংসারে আছে কি মায়ার টান।

কতো চেনা
হাকিকুর রহমান

পথের কিনারে দাঁড়ায়ে বাউল
গেয়ে যায় কোন সুরে,
শরতের শেষে কাশফুল বন
ডেকে নেয়ে সেই দূরে।
শাড়ির আঁচলে কুড়ায়ে যুঁথিকা
মালিনীর মেয়ে ছোটে,
কাজল কালো দীঘির জলেতে
গাঢ় লাল পদ্ম ফোটে।
কৃষাণীর মেয়ে সাজিছে হোথায়
হবে তার বিয়ে আজ,
আমলকি শাখে দুলিছে কপোতী
হাতে নাই কোনও কাজ।
বুকের ভেতরে বাঁধিয়া বেদনা
হেঁটে যায় বিরহিনী,
আশা নিরাশার ছলনার মাঝে
যেনো তারে কতো চিনি।

Unsent letter
Hakikur Rahman

Once he met, the ex-girlfriend of a friend
He used to like her, but could not tell her the truth
One day while she was dancing with the friend
(At that time, they did not become ex),
When she comes near him, he could smell her body
It is like a beauty soap, or an unknown perfume, or a nameless flower
So pure, so pleasant, so charming, he cannot describe
But, the smell remained in his heart for a long time.
She was so pretty; he thought he could sing a song for her
One song, two songs, three songs, songs forever
In fact, if she passes by him, even with his closed eye
He could tell her presence
So, to see her for a glance, he remained standing on the way
She comes and goes.
One day gone, two days gone, three days gone
Numerous days gone
She never passes through this way
But, for her he left some yellow flowers on the path
Not all yellow, with a red spot in the middle
In the hope that someday, she will pass through the way
And maybe she will recognize the flowers.
However, one day he wrote a letter for her
I quote, “And here goes the infinite solitude of a
Broken heart, who remains imprisoned forever
In your absence… , if you feel the tears of my eyes
Falling from the sky, you will understand that
Someone was there for you”.
But, for some unknown reasons, he never sent the letter
He kept it under the wet pillow.

(Inspired by a true story)

পেটের ক্ষুধা মেটে?
হাকিকুর রহমান

জানালার দু’পাল্লাই খুলে দিয়েছি
জোসনা গলবে বলে-
কোন সে নক্ষত্র খসে পড়ে গেলো
কার অভিব্যক্তি তাতে থমকে দাঁড়ালো
কোন পথ খোঁজা পথিক চমকে চাইলো
বাঁকা চাঁদখানি তো রইলো ঢলে।।
আঁধারির মাঝে লন্ঠন জ্বেলে
অভাগিনী চেয়ে রয়-
ফাগুনের রাতে পাপিয়া কি যে গায়
শূন্য তরীটি কে বা বয়ে যায়
নিংড়োনো চোখে মাধবী ফিরে চায়
ভরা যমুনা তো ধীরেই যে বয়।।
ফুটো আধুলিটাকে হাতে নিয়ে
বসে রয়েছে ভিখারিনী-
জঠরের জ্বালা তাতে তো নিভে না
মায়ার হাতখানা কেউ কি দিবে না
বাটিভরা ভাতে ডেকে তো নিবে না
কেউ কি তার খবর জানি।।
তা, জানালার দু’পাল্লা খুলে
কি আর পেটের ক্ষুধা মেটে?
(সংক্ষিপ্ত)

(লেখাটা কবিতা দিবসে আমার মতো
যতো হতচ্ছাড়া লিখিয়ে আছে
তাদেরকে উৎসর্গ করলাম।)

একটু প্রশান্তি
হাকিকুর রহমান

স্বপ্নগুলোকে ধুয়ে মুছে
হ্যাঙ্গারে ঝুলিয়ে, নেড়ে দিয়েছি
সোনা রোদ্দুরে।
চৈত্রের শেষে, পড়ন্ত বিকেলে
জীবনের স্থাপত্যগুলোর বিবেচনায়
স্বপ্নগুলোকে বড় ন্যাড়া মনে হয়।
মনে হয়, সর্দি জ্বরে ভুগছে।
তাই ওগুলোকে একটা নতুন মোড়কে
বাঁধার জন্যে, ধুয়ে দিলাম।
জানি আমি, শলতেহীন প্রদীপের মতো
ওগুলোর আর ঝাঁঝ নেই।
তবুও একফালি চাঁদের মতো,
কিম্বা, একফালি তরমুজের মতো
ভালোবাসি তাদেরে।
দেবে কি তারা
কোনও এক কালে, ক্ষণিকের তরে
একটু প্রশান্তি!

পুরাতন ভৃত্য
হাকিকুর রহমান
 
বাজাও! তবলাখানা বাজাও-
ওহে তবলচি, থামলে কেনো? বাজাও।


ভৈরবী, খাম্বাজ, তিলক কামোদ রাগে
হৃদয়ে নিকি, আসরন, জিন্নাত, হিঙ্গুলা জাগে
লয়ে লয়ে হ’তে চাই অতি মুগ্ধ
পরাণটা হোকনা আরও একটু পরিশুদ্ধ।


রাধো! আরও বেশী করে রাধো-
ওহে বাবুর্চি, যাচ্ছো কোথায়? থামো।


খেতে চাই পায়েশ, সালওয়া, মান্না
বেশী করে রাধো যাতে পড়ে টান না
খেতে চাই নুলো ডুবিয়ে আরও
রেধে যাও যতো তুমি পারও।


নাচাও! আমারে আরও নাচাও-
ওহে নৃত্যকর, পালাও কেনো? আরও নাচাও।


হোক না তা চৌতাল, সুরফাঁক, বিষম পদী
নেচে যেতে চাই আমি আমৃত্যু অবধি
নাচিয়ে হবার নামটাকে সাথে নিয়ে
হয়তোবা হবে দেখা অন্য কোনও মাত্রায় গিয়ে।


হাভাতে পদবীটাকে আমি খন্ডাতে চাই
তাইতো দাদরা, কাহারবার তালে আবারও গাই
সাথে চলে নানাবিধ লয়েতে নৃত্য
ওহে বনমালি, আমি তো তোমার অতি পুরাতন ভৃত্য।

পথের দিশা
হাকিকুর রহমান

রাতের আঁধার কাটলো যবে
বাহির হলাম পথে,
চরণ দু’টো আর চলেনা
ব্যর্থ মনোরথে।
এদিক ফিরি, ওদিক ফিরি
পথটা গেলো কই?
বাহির ঘরের আগল খোলা
অন্ন বাড়ন্তই।
আগ বাড়িয়ে ভাবার আগেই
চুপটি মেরে যাই,
পথ হারানোর ভয়ে আবার
পিছন ফিরে চাই।
এক্কা দোকা খেলার ছলে
থাকি সবই ভুলে,
দেনা মোরে পথের দিশা
নাহয় নেনা তুলে।

(আমার লেখাগুলো জীবন থেকে নেয়া।
এখানে কোনও রাজনৈতিক বক্তব্য নেই।)
- সর্বসত্ব লেখক কর্তৃক সংরক্ষিত

পথের সাথী
হাকিকুর রহমান

গভীর নিশীথে বাঁশ বাগানের জোনাকগুলোর
কাছ থেকে এক মুঠো আলো ধার করে নিয়ে
জেগে থাকা। হোগলা পাতার ছাউনি ঘেরা
গৃহকোণে ঘুমিয়ে থাকা কাঠুরের যুবতী বঁধুর
স্বপ্নে এসে ভর করে কোন এক সোনালী মেঘ।
নৈবেদ্যর থালি হাতে দ্বারে দ্বারে ঘুরে ফেরে
কোনও এক অশীতিপর ভিখারিনী, এতটুকু
আশা নিয়ে বুকে, যে আজ কোনোমতে ভরে যাবে
রঙিন ফুলে ফুলে থালাটি। ওই এক মুঠো আলোতে
নিজেকে নতুন করে চেনা, আর স্বপ্নগুলোকে
উদাসীন মেঘের ভেলায় ভাসিয়ে দিয়ে
তন্ময় চেয়ে থাকা নীলিমার পানে।
আসমুদ্র হিমাচল ঘিরে সোদা মাটির ঘ্রাণের
হাতছানিতে আবার পথকে চলার সাথী করা।


(আমার লেখাগুলো জীবন থেকে নেয়া।
এখানে কোনও রাজনৈতিক বক্তব্য নেই।)
- সর্বসত্ব লেখক কর্তৃক সংরক্ষিত

অজ্ঞাত গন্তব্য
হাকিকুর রহমান

বালখিল্যতায় কাটিয়ে দিলাম তো কাল,
জীবনের গভীর উপলব্ধিকে অনুধাবন না করে-
ভাবিনি কখনও এমনটি হবে,
কালের কন্ঠে রজ্জু হয়ে ঝুলে রইবো।
অস্বাভাবিকতারও তো সীমা আছে-
তাহলে কি ভুল পথে এতোদিন প্রাণপাত?
হায়রে অদৃষ্ট!
কেনো করো মোর সাথে এতো পরিহাস?
প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির বেড়াজালে বেঁধে
পাইনাকো পরিত্রাণ।
তবেকি, কালান্তরের খেয়া বেয়েই
ধাবমান হবো, কোনও এক অজ্ঞাত গন্তব্যে!
(আমার লেখাগুলো জীবন থেকে নেয়া।

এখানে কোনও রাজনৈতিক বক্তব্য নেই।)
- সর্বসত্ব লেখক কর্তৃক সংরক্ষিত

কাঁদতে শিখেছি
হাকিকুর রহমান

কাঁদতে যখন শিখেছি একবার
মাগো,
কেইবা আর কতো কাঁদাবে-
ঘরছাড়া যখন হয়েছি একবার
মাগো,
কেইবা আর ঘর থেকে তাড়াবে।
চিহ্ন মেপেই তো পথে দিয়েছিলাম যে পাড়ি
বুঝতে পারিনিকো কখন বিচ্যুত হয়েছে গাড়ি,
কথাগুলি সবই রইলো যে পথেতে পড়ে
পারিনিকো কিছুই নিজের মতো নিতে গড়ে।
তাইতো এখন হিসেব করিনে আর
মাগো,
থাকুক না খাতাটা শূন্য-
সাঁঝের প্রদীপ কেইবা জ্বালাবে আর
মাগো,
সে আশা রইলো যে অপূর্ণ।

কর্মফল
সুন্দরেরে ডাকিয়া কহিলাম, ওহে
তুমি তো সদা অতি মনোহর
তবে কেনো নাপিতেরে সকলে
নরসুন্দর কহে?
সুন্দর স্মিত হাসিয়া কহে,
শ্রবণ করোহে বটে-
এ পৃথিবীতে যাহা কিছু আছে
তাহা নামে নয়,
তাহা কর্মফলেই ঘটে।

- হাকিকুর রহমান

মৌনতারে ডাকি
হাকিকুর রহমান

শুধাইবো কাহারে, কাটে কাল
অনাদিকালের তরে
অনন্ত রাত্রি পারে।
হায়রে অনাদিকালের অতীত,
তুমি নীরবে, নিভৃতে
কার সাথে কথা কও-
যুগ যুগান্ত ধরে
পিয়াসি চিত্তে
মোর সাথে জেগে রও।
কত জীবনের আরাধনা,
কত সাগরের জল-
মিলেমিশে আজি একাকার হলো, তবু
বুঝিতে পারিনি তার
সমসাময়ীক ছল।
ঘটমানতায় নিবৃত রাখি,
তরঙ্গহীন সায়রে ভাসিয়া, হইযে আলুথালু
তবুও কেন জানি, কাতর চিত্তে
মৌনতারেই গেলাম ডাকি।

ছড়াঃ ভূতের কেচ্ছা
হাকিকুর রহমান  

হাচ্ছো! হাচ্ছো!!
এই যে শোন খোকা খুকু
কেমন মজা পাচ্ছো?
আমড়াগাছের
দামড়া ভূতের কেচ্ছা শুনে
ভয়ে কি সব গাচ্ছো!
শেওড়াগাছের মগডালেতে
মামদো ভূতের বাসা তাতে,
ভর দুপুরে গাছের তলে
তোমরা কেন নাচ্ছো?
বাঁশবাগানের আঁধার পাঁকে
খ্যাংরা পেত্নী লুকিয়ে থাকে,
রাত বিরেতে ঘুমের ঘোরে
কেন সেথায় যাচ্ছো?
আগলে রেখে ঘরের দুয়ার
খেমতা আছে বাইরে যাবার,
দাদী-নানীর কেচ্ছা শুনে
ভিমরি কেন খাচ্ছো?
হাচ্ছো! হাচ্ছো!!

 চেতনার দর্পণ
হাকিকুর রহমান

দুঃখ হেরি সুখ মোর, করে নিভৃতে গমন
জীবনের কষাঘাতে, ভীরু ভীরু পদে, পিছু পলায়ন।
কার ব্যথা কেবা বোঝে, সবই কাকস্য পরিবেদনা
ক্ষণিকের তরে উজ্জীবিত হয়ে, সমুখের পানে পদচারণা।
সময়ের বশীভূত কর্মকান্ড, মনো পিঞ্জরে রাখি
চেতনার অভিসারে বিদীর্ণ বক্ষে, কিভাবে কাহারে ডাকি।
অভিপ্রায় মিটিলোনা কেনো জানি, এ জগতে হায়
কাছে যারে রাখি ধরে, সেতো দূরে চলে যায়।
জীবনের কাছে বিনা বাক্যব্যয়ে, এ যেনো আত্মসমর্পণ
মায়াজাল ঘিরে হৃদয় গভীরে, ধরি চেতনার দর্পণ।