Thursday, February 24, 2022

 

নৈবদ্যের থালা
হাকিকুর রহমান 
 
ইশারায় ডাকো হে
সে এক আকুল অম্বরে,
প্রান্তিক চাহিদাসমূহকে
বুকের ভেতরে ঢেঁকে রেখে-
ওহে মোর বসন্তের লক্ষী
কোন পানে ধাঁও,
মাধবীকুঞ্জের প্রলেপ লাগিয়ে
হৃদয়ের এক কোণে।
কোন সে অজানা ফুলের গন্ধে
আবেগ তাড়িত হলো
ওই সেই আশাহত প্রণয়-
ওহে মোর ভিখারী বসন্ত
কেন ফের ঘুরে ফিরে
আসো এই শূন্য আঙনে?
কাহাতক স্বপ্ন দেখার
ভান করে
প্রহরগুলোকে উতরানো-
হৃদয়ের স্পন্দনগুলোকে
চুরি করে লুকিয়ে রাখি,
কোন সে নৈবদ্যের
খালি থালাটার ওপরে।

 

মহাপথিক
হাকিকুর রহমান 
 
প্রভাতের প্রহরী হ’বার আকাঙ্ক্ষাটা
হৃদয়ে নিয়ে
অবলোকন করলাম
সদ্যস্নাত ঊষার দুয়ার-
নিদ্রাচ্ছন্ন আঁখিতে এঁকে দিলো
কে যেনো
কোনও এক অতন্দ্র প্রহরীর
আলোক চন্দন লেখা।
শুভ্র ললাটে ফের
এঁকে দিলো
ক্লান্তিহীন নিঃশর্ত
বলিরেখা-
ইচ্ছার প্রাচুর্যে
পরম গাম্ভির্যে
আবার হেঁটে ফিরি
সীমাহীন সীমানা প্রাচীর ঘিরে।
থাকুক পড়ে
পথহীন মহারণ্য
বিন্যস্ত রহুক
একাল সেকালের ওপর-
দূরত্বের ব্যবধান
পরিব্যাপ্তিত হয়
শূন্যে- মহাশূন্যে,
এ যেনো কোনও এক
চেনা কিম্বা অচেনা পথের
মহাপথিক।

 

কাল কহে মহাকালকে,
ওহে অনন্ত,
তুমিতো বিস্তৃত,
তোমাতে বিলীন হই-
মহাকাল কহে,
ক্ষুদ্র ভাবিও না নিজেরে,
তোমার সত্বাতেই
আমি সদা প্রীত রই।
- হাকিকুর রহমান
নিন্দা কহিলো স্তুতিরে ডাকি,
আমিতো রহি ধরা ছোঁয়ার বাহিরে,
প্রতিনিয়ত দিয়ে যাই ফাঁকি।
তোমাতে তো সকলেই হয় প্রীত,
আর আমাতে তাহারা হয় যে ভীত।
স্তুতি হাসিয়া কহে,
মিত্র মম,
তোমার উপস্থিতি বিনে
আমিতো গোত্রহীন সম।
- হাকিকুর রহমান

 

আধখানা প্রেম
হাকিকুর রহমান 
 
গরাদের ওপারে আধখানা প্রেম
গরাদের এপারে আধখানা প্রেম-
দু’জনার আঁখিতেই অশ্রু,
একজনার ফিরে যাবার অশ্রু,
অন্যজনার ফিরে পাবার অশ্রু,
এক্ষণে, দু’টি প্রাণ
যতই চেষ্টা করুক না কেনো
একত্রিত হবার-
কোন মতেই তা হবেনা-
গরাদ,
আইন,
উভয় পক্ষের আইনজীবীর সুউচ্চ কথোপকথন
বিশ্লেষণ,
পর্যবেক্ষণ,
প্রাণপণ- প্রাণপণ;
অতঃপর
বিচারকের হাতুড়ি-
ততদিনে
নিঃশেষিত প্রেম খায়
ধূলো ভরা পথে
গড়াগড়ি...
গড়াগড়ি.....
(অসমাপ্ত।)

 

ক্ষণকালের সন্ধিক্ষণ
হাকিকুর রহমান 
 
ধীরেই যদি
হাঁটা হয়, পথটায়
ইচ্ছেটাকে আর না হয়
বদলাবোনাকো,
সময়ের সাথে
ফেরি করে ফিরে-
গন্তব্যটাকেও আবার
নতুন করে আর
বদলাবোনাকো,
ছেঁড়া প্যান্টের
পকেটটাতো ফুটো-
আর তাও
সেটাকে আর
রিপু করা হয়নিকো,
শর্তসাপেক্ষে
নিচু স্বরে, যদিওবা
ডেকেছিলাম কাকে যেনো-
তবে তাতে সাড়া
দেবার মতোন
কেউ ছিলনাকো,
তবে, শেষমেশ
হয়তোবা আশার ঝাঁপিটাকে
সময় মতন বদলে নেবোক্ষণ-
হয়তোবা হতে পারে
তা কোনও এক
ক্ষণকালের সন্ধিক্ষণ।

 

One day
Hakikur Rahman 
 
One day
I'll not be writing anything,
perhaps not due to any reason,
or, perhaps a reason beyond imagination
and, would not be posting...
One day
I'll not be writing any verse,
perhaps not being well enough,
or, perhaps due to an unknown reason
and, would not able to post...
One day
I'll not be posting any poem,
perhaps due to my prolonged absence,
or, perhaps my days were ended there
and, no one would know.

 

একদিন
হাকিকুর রহমান 
 
একদিন
কিছুই হয়তোবা লেখা হবে না
কারণ, কোন কারণ ছাড়াই মনটা হয়তো সায় দেবে না
অথবা, কোনও এক কারণ যা কিনা পৃথিবী কোনদিনও জানবে না
আর, তাই কোনও লেখা ছাপা হবেনাকো.....
একদিন
হয়তোবা কোনও পংক্তি লেখা হবে না
কারণ, হয়তোবা শরীরটা ভালো যাবে না
অথবা, হয়তোবা কোনও অজানা অসুখে ধরবে
আর, তাই পৃষ্ঠাগুলো খালিই রয়ে যাবে.....
একদিন
হয়তোবা কোনও কবিতা আর লেখা হবে না
কারণ, এক অনেক লম্বা ছুটি নেবার ফলে
অথবা, হয়তোবা জীবনের পংক্তিটাই শেষ হয়ে যাবে
আর, কেউই তার খোঁজ রাখবে না।

 

অজানা আলো
হাকিকুর রহমান 
 
ঘন বাবলার বনে
রুপোলী বিদ্যুৎ শিখা
চমকিয়া যায়-
গলদঘর্ম হয়ে
কোন সে পথিক
পুরানো পথের পানে
ফের ফিরে চায়।
এ কি কারো
আজন্ম চাওয়া,
নাকি কোনও এক মুহূর্তের
কল্পনা-
ভাবনার সাগরে ভাসা
কোনও এক পদ্মফুল
আকাশের পানে চেয়ে
অবারিত মনে
এঁকে যায় আল্পনা।
সে এক বিবাগী
হাতের আঁজলে
কিছু ইচ্ছাকে তুলে নিয়ে
গন্তব্যটাকে আরো
প্রসারিত করে-
চমকিয়ে যাক ঐ সেই
বিদ্যুৎ শিখা
আর তাতেই
অচেনা পথটা
অজানা আলোতে ভরে।

 

বলিদান
হাকিকুর রহমান 
 
চিন্তার ছেঁড়া কাঁথায়
কে যেনো বহু প্রকারের
রঙিন সুতো দিয়ে
রিপু করার
প্রচুর চেষ্টা করেছিলো-
আর ইচ্ছার পরোতে পরোতে
আলসার জমে গিয়ে
মানচিত্রবিহীন গতিপথে,
দিকহারা কোনও এক নাবিক
সেই ওই ঝরেপড়া
শুকতারাটাকেই সাথী করে,
আবার অজানার পথে
পাড়ি জমালো-
কোনও এক নৈঃশব্দের
প্রহরী হয়ে,
ক্রমাগত গন্তব্যের মাঝে
নিজেকে বিলীন করে,
সে এক অজানা
সুখের পেছনে চিরতরে বলিদান।

 

ক্ষ্যাপার আদর্শ
হাকিকুর রহমান 
 
ওরে ক্ষ্যাপা!
হঠাৎ অমন করে খেপলি ক্যান?
তা, বাবু-
ওইযে ও পাড়ার কেরামত আলী
কাজও করে না, কম্মোও করেনা
শুধু মুখে বুলি আওড়ায় খালি খালি-
শুনেছি নাকি কোন মতাদর্শের লোক
আর তাই কাজের প্রতি নেই তার কোনো ঝোঁক-
যেখানে এককথায় পাওয়া যায় লাখ টাকা
সেখানে আমার থালাটার পানে চাও
ওটা তো বহুদিন ধরেই রয়েছে ফাঁকা-
তা, তুইও না হয় ধর
কোনো-না-কোনো মতাদর্শ-
গোল্লায় যাক বিবেক, বুদ্ধি, কিম্বা আদর্শ।
ঠিক বলেছো বাবু,
দেখি একটুখানি চিন্তা- ভাবনা করে
কথা নেই, বার্তা নেই
যায় যদি একদিন কবে জানি মরে-
তাইতো ইচ্ছে হলেও
ওই দলেতে যোগ দিতে পারিনে,
আর আধ পেটা খাই, কিম্বা না খাই
ওসবের ধারও ধারিনে।
তবে, এটা বোধহয়
মোটামুটি জানি, আর তা
খাঁটি মনে মানি-
যদি একবার কেউ হয় আদর্শ হ’তে চ্যুত,
হাটে তো হাড়ি ভাঙে একদিনই
আর যা হ’বার তা হতেও পারে দ্রুত।

 

কার অপেক্ষায়
হাকিকুর রহমান 
 
মাটির গাগরীটা গেলো ভেসে
নব জোয়ারের জলে,
সাথে গেলো ভেসে
কোন সে কুলবঁধুর করুণ কাহিনী।
ভাবনার পিচ্ছিল সিঁড়ি বেয়ে
কেই বা যে ওঠানামা করে
প্রতিনিয়ত,
যেমন সময়গুলো পারাপার করে
দিবস-রাতের মাঝখানে,
আর তারই করতলে
কে যে নিবেদন করে আরতির ফুল।
বুক নাগাল করা জলে
নামার অবসরে
কার যে সমাপন করা হয়না স্নান-
গহন ঝাউবনে,
এখন আর ডেকে ওঠে না কোকিলা
আগের মতো করে।
কার যে ইচ্ছের ফুলগুলো
ক্রমাগত ঝরে পড়ে
বিবর্ণ হয়ে,
প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির সন্ধিক্ষণে-
তবুও তরুলতাগুলো
করে যায় আত্মসমর্পণ
বুড়ো অশথের শাখা জড়িয়ে।
এই যে ক্রমাগত বিলীন হওয়া,
এরই মাঝে বেঁচে রয়
ওই যে কুলবঁধুর স্বপ্ন
ওই যে ভাবনার সিঁড়ি
ওই যে ইচ্ছের ফুল
ওই যে তরুলতা।
তবুও কেনো যেনো রয়ে যায়
কেইবা যে কার তরে অপেক্ষায়....

 

Father
Hakikur Rahman 
 
One day, a loving father
bought a peculiar machine
for his loving daughter
so that she could produce good dreams,
The other day, the tender father
bought an invisible brush
for his adoring daughter
so that she could paint her thoughts,
In another day, the caring father
bought a tiny silver coin
so that she can pour it into the piggy bank
and becomes prosperous in her life,
A day unknown, the devoted father
bought his own heart
for the fond daughter
but she refused to admit his sacrifices.

 

রৌদ্রস্নাত বৃষ্টি
হাকিকুর রহমান 
 
একদিন হঠাৎ ইচ্ছে হয়েছিলো, রৌদ্রস্নাত বৃষ্টিতে ভেজাবো নিজের মুখখানা,
আকাশ, নদী, পাহাড়, সমুদ্রকে স্বাক্ষী রেখে হেঁটে যাবো,
গাঁয়ের পথটা ধরে আরেকবার।
মেঘ, পাখি, বকুল, অরণ্যকে সাথী করে নেবক্ষণ।
একটা জাদুছড়ি হাতে নিয়ে, কইবো, মাথাটা ঘোরাও
একবার ঘোরাও দেখি- আঁখি মেলে দেখি, কেমন সুখে আছো তোমরা।
কোন পরদেশ হ’তে অতি প্রত্যুষে, উড়ে এলো বাহারী একটা প্রজাপতি,
সাথে করে নিয়ে এলো অরুণ রবিকে। দু’জনার মাঝে বড়ই ভাব।
ওদিকে আবার বনের ধারে ঘুমিয়ে পড়া লজ্জাবতীটাও আড়ামোড়া ছেড়ে
জেগে ওঠে, কাক ভেঁজা বৃষ্টিকে সাথে নিয়ে।
জন্মান্তরের চেনা সরু নদীটার পানে ফিরে চাই, অতি পরিচিত
শালের বনের ধার দিয়ে একটু হাঁটি,
শেফালী, কলমিলতা, ইউক্যালিপ্টাস, মেহগনি প্রশান্তি জাগায় দেহমনে,
কি সে এক প্রশান্তি! কোন সে অচিন গাঁয়ের সুন্দরী বঁধু এসছে কাঁখে লয়ে
গাগরী। গান গেয়ে গেয়ে ভরে নিয়ে যাবে জল, উনুনে চড়াবে নানাবিধ খাদ্যাদি।
পদ্মপাতা হতে এক ফোঁটা জল যবে টস্ করে পড়লো দীঘির জলে,
তড়াস করে জেগে উঠলো কুয়োর ধারের কুনো ব্যাঙটা
এই বৃষ্টিতে সেও একটু ভিজে নেবে ঘটা করে, ওদিকে পাকুড় গাছের শাখে বসে
শিস্ দিয়ে যায় নীলকন্ঠী। মরা গাঙের জলে আয়নার মতো প্রতিচ্ছবি পড়েছিলো
পাশে নুয়ে পড়া অশথের। তবে সেটা নড়ে চড়ে অদৃশ্য হলো,
বৃষ্টির ফোঁটাগুলো পড়ে।
আমিও ভরা ফাগুনের রাঙানো অধ্যায়ে অন্তহীন হাঁটলাম,
যতই হাঁটি, আজন্ম পরিচিত নদীটাও হাঁটে সাথী হয়ে।
আগেই বলেছি, আরও অনেকগুলো সাথী জুটে যায়।
ও! বলা হয়নি এখনও। ধানের ক্ষেত, শরষের হলুদ ফুল, সাথী হতে চেয়েছিলো।
হ্যা, আমি তৎক্ষনাৎ রাজি হয়েছি, আর অপেক্ষা করেছিলাম,
এক পশলা ঝরো ঝরো বৃষ্টির। ঠিকই সে কথা রেখেছিলো,
আমার আঁখির পাতাদুটো ধুঁয়ে দিতে।

 

অবিনশ্বরের পদতলে
হাকিকুর রহমান 
 
কবে যেনো নিজেকে একেবারেই হারিয়ে ফেলেছিলাম,
কবে যেনো আকাশটা গিয়েছিলো ঢেঁকে ঘণ কালো মেঘে,
কবে যেনো নিঃশেষিত হয়ে গিয়েছিলো মরুদ্যানের ক্ষুদ্র জলাধারটা,
কবে যেনো স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে গিয়েছিলো হতাশার চিহ্নগুলো,
কবে যেনো ঝরেছিলো এক পশলা বৃষ্টি চৈত্রের রোদের বুক চিরে,...
কবে যেনো পূর্ণ জোসনায় চাঁদটা উঁকি দিতে ভুলে গিয়েছিলো
দারুচিনি গাছটার ফাঁক দিয়ে,
কবে যেনো কে হেঁটে গিয়েছিলো মৌন পায়ে পৌষের
ঝরা পাতার মর্মরে,
কবে যেনো কে গেয়ে ফিরেছিলো কোন সে চেনা সুর ধরে
অচিন গাঁয়ের পথ বেয়ে,
কবে যেনো কে অস্ফুট স্বরে কি কথা কয়েছিলো
যদিওবা সেটা বুঝতে পারেনি কেউ কখনও,
কবে যেনো কে বঁধুয়ার বেশে আলতা রাঙা পায়ে
পালকীতে চড়ে গিয়েছিলো কোন সুদূর গাঁয়ে
যদিওবা কেউ তার খবর আর রাখেনি,....
তবুওতো পৃথিবীটা ঘুরেই চলেছে তার কক্ষপথে
যদিওবা শত-সহস্র-লক্ষ-কোটি বছর পরে
হয়তোবা থেমে যাবে চিরতরে,
কারণ, অন্য সব কিছুর মতো সেওতো নিতান্তই নশ্বর,
আর তাই, বিলীন হয়ে যাবে অবিনশ্বরের পদতলে।

 

হে দুঃখ
হাকিকুর রহমান 
 
হে দুঃখ, তুমি কি আমার, নাকি ওর-
চোতের রোদ্দুর, নাকি মরা ভাদর,
কার শূন্য মন্দিরের শাঁখ,
প্রকাশিত হও যখন, নেই তাতে কোনো রাখঢাক,
শতশত কুশীলব তব সংজ্ঞা দিতে যায় ঘেমে
তখন, কি নিদারুণ প্রশান্তি তব আঁখিতে আসে নেমে।
এ যেনো কোনও ঘনঘোর রাতের আঁধারে
খেলে যাওয়া অবাধ্য দামিনী,
পলকে বিজরি ঝরানো ক্ষণকাল-
ভর করে তাতে আরও আরাধ্য রাগিনী।
এতো শরতে পেখম মেলা
কোনও ময়ূরের পুচ্ছ,
সম্বিৎ ফিরে পাবার আগেই
দৃশ্যতঃ হারায় সকল ভাবনা গুচ্ছ।
তবুও তুমি কোন অভিমান নিয়ে
বারেবারে যাও যে ডেকে,
কি যে চিত্রকল্প তোমার সমস্ত প্রহর জুড়ে
নিরানন্দে চলো হে এঁকে।
এ যেনো কোনও ফুটো কড়ির
এপিঠ আর ওপিঠ,
যতই করা হোক না প্রচেষ্টা
কোনোক্রমেই যাবে না খোলা সেই গিঠ।

 

চিহ্ন বিশেষ
হাকিকুর রহমান 
 
হাসি, দন্ত বিকশিত হাসি, মৌন হাসি,
স্মিত হাসি, নাকি দুঃখভারাক্রান্ত হাসি-
যা কিনা কখনো কখনো পেঁজা তুলোর মতো ওড়ে
মনের আকাশে, আর বিভিন্ন স্বরুপে দেখা
দেয় বারো মাসি। তবে কিনা, কখন যে টুপ
করে খসে পড়ে নক্ষত্রের মতো, না বলে কয়ে
কোথায় যে বিলীন হয়ে যায়, কেউ জানেনা
যায় সে হারিয়ে কোন সে বলয়ে।
মাঝে মাঝে মনে হয়, এ যেনো কোনও
বিধবার সাদা শাড়ির আঁচল, অথবা
কোন অভাগিনীর ভিজে যাওয়া আঁখির
কাজল। আবার কেনো জানি লাগে
ওইটা হয়তোবা কোনও তিমির পেটের
ভেতরের অন্ধকার, কিংবা খোলনোলচে বিহীন
কোনও বদ্ধদ্বার।
হয়তোবা কোনও ফিনফিনে মোমবাতির
ক্ষীণ সলতের আলো, না ঘষা-না মাজা
কোনও উল্টোনো হাড়ির ভেতরের কালো।
তাও আবার কখনও কখনও হয়ে যায়
নিরুদ্দেশ, তবে মনে হয় অনিচ্ছাসত্ত্বেও
রেখে যায়, কখনও তার চিহ্ন বিশেষ।

 

পুরাতন ভৃত্য
হাকিকুর রহমান 
 
বাজাও! তবলাখানা বাজাও-
ওহে তবলচি, থামলে কেনো? বাজাও।
ভৈরবী, খাম্বাজ, তিলক কামোদ রাগে
হৃদয়ে নিকি, আসরন, জিন্নাত, হিঙ্গুলা জাগে
লয়ে লয়ে হ’তে চাই অতি মুগ্ধ
পরাণটা হোকনা আরও একটু পরিশুদ্ধ।
রাধো! আরও বেশী করে রাধো-
ওহে বাবুর্চি, যাচ্ছো কোথায়? থামো।
খেতে চাই পায়েশ, সালওয়া, মান্না
বেশী করে রাধো যাতে পড়ে টান না
খেতে চাই নুলো ডুবিয়ে আরও
রেধে যাও যতো তুমি পারও।
নাচাও! আমারে আরও নাচাও-
ওহে নৃত্যকর, পালাও কেনো? আরও নাচাও।
হোক না তা চৌতাল, সুরফাঁক, বিষম পদী
নেচে যেতে চাই আমি আমৃত্যু অবধি
নাচিয়ে হবার নামটাকে সাথে নিয়ে
হয়তোবা হবে দেখা অন্য কোনও মাত্রায় গিয়ে।
হাভাতে পদবীটাকে আমি খন্ডাতে চাই
তাইতো দাদরা, কাহারবার তালে আবারও গাই
সাথে চলে নানাবিধ লয়েতে নৃত্য
ওহে বনমালি, আমি তো তোমার অতি পুরাতন ভৃত্য।