Thursday, March 11, 2021

 

গন্তব্যের হাতছানি
হাকিকুর রহমান 
 
পায়েতে কখন বিঁধেছে চোরা কাঁটা
কাঁদিয়া কহে উচ্চাকাঙ্খা,
তাহলে কি হঠাৎ করিয়াই, পিছাইয়া পড়ার
রহিয়াছে আশঙ্কা?
 
উদাসীনতা, কি সেথায় আসিয়া
অযথা বাঁধ সাধে?
উৎকন্ঠাহীন আশাগুলি
তবুও কেনো জানি ঘর বাঁধে।
 
কেহ কহে ডাইনে যাও
কেহ কহে পিছু চাও,
প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির গোলকধাঁধায়
নিজেকে, নতুন করিয়া পাও।
 
তাই, একটুখানি জিড়িয়া নেওয়া
পরিশ্রান্ততার ফাঁকে,
গন্তব্য, সেতো অম্লান
আর, সদাই হাতছানি দিয়া ডাকে।
সব ফাঁকি 
হাকিকুর রহমান 
 
ঘরের যারা রইলো ঘরে
পরের যারা হইলো পর,
আপন করে নিলাম যারে
বেলা শেষে ভাঙ্গলো ঘর।
 
গাঙ পেরুনোর আগেই দেখি
ঘাটেতে যে ডিঙ্গি নেই,
সকল কিছুই লাগলো মেকি
অসময়ে খেলাম খেই।
 
ঘরেরও না, পরেরও না
এমন জনার দশা কি?
ভেসে যাওয়া শ্যাওলাপানা
বর্ষা কালের বাসন্তী।
 
হাতের গেলো, পাতের গেলো
রইলো তবে কি বাকি,
দিনের আলো যেই ফুরালো
সাঁঝের আলোয় সব ফাঁকি।

 

 

রক্তভেজা সার্ট
হাকিকুর রহমান 
 
রক্তভেজা সার্টটাকে সরায়ে রাখেনি মা,
অন্যত্র-
খাঁটের পাশেই ঝোলানো রয়েছে,
সকাল-দুপুর-সন্ধ্যা-রাতে
মনে করিয়ে দেয় তার উপস্থিতি
ওই দাওয়ায়।
 
বন্ধুরা রণাঙ্গন থেকে ওই একটাই শেষ স্মৃতি
ফিরিয়ে এনেছিলো-
বাকি আর কিছুই আনতে পারেনি।
শত্রুর গোলায়, গ্রেনেডের আক্রমনে
সমস্ত শরীরটা হয়ে গিয়েছিলো, ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন-
ছিলোনা কিছুই অবশিষ্ট।
 
সে এক অবধারিত মৃত্যু, যাতে কোন শোক নেই-
যাতে আছে দেশ মাতৃকার প্রতি গভীর ভালোবাসার
প্রকাশ। যা, রয়ে যাবে অনন্তকাল ধরে।
 
তাই মা, কখনও সরালোনা ওটাকে-
চোখ বুজে অনুভব করে, পরাণের ধন
সন্তানের উপস্থিতি,
যার স্মৃতি কখনই ভোলার নয়।
সে যে এদেশের সূর্যসন্তান,
সে যে মৃত্যুহীন প্রাণ।
 
(একুশকে স্মরণ রেখে ২১লাইনে
লেখা হয়েছে কবিতাটা)

 

একুশের প্রহরে
হাকিকুর রহমান 
 
ওরা মরেনি, মরিতে পারেনা।
 
ওরা বেঁচে আছে, সকল বাঙালির হৃদয়ের অভ্যন্তরে
আর অশরীরী আত্মার আলোক ছড়ায়, প্রতিটি অন্তরে।
এই জগতে কত জাতি আছে- এসেছে- গেছে,
বলতে কি পারো? কতজন ভাষার জন্যে শহীদ হয়েছে?
 
এসেছিলে এদেশে ক্ষণজন্মা হয়ে,
হয়েছো আজ নীহারিকা
তাপিত, তাড়িত, তটিনীর দেশে,
জ্বলে থাকো হয়ে দীপশিখা।
 
কে বলে তোমরা নেই!
যখনই তাকাই পথে-প্রান্তরে,
অজস্র-অগনিত লোকের ভীড়ে
সেই মুখগুলি, ভাসেতো আঁখিতে, নীরবেই।
 
দিয়েছো মোদেরে সমৃদ্ধ করে,
দিয়েছো বাঁচিবার অধিকার
দেখেছি মোরা চেতনার আলো,
জাগিয়েছো হৃদয়ে আকুতি স্বাধীকার।
 
আজি এ প্রহরে সময় এসেছে,
শানিত করিতে সেই চেতনা
উদ্বুদ্ধ হই, এই অরুণালোকে,
আর নয় কোন অনুশোচনা। 
 
(“৫২ থেকে ৭১” কাব্য থেকে)
 

 

মুখচ্ছবি
হাকিকুর রহমান 
 
দৈবাৎ, রঙ তুলি নিয়ে
আঁকতে চেয়েছিলাম
কার মুখচ্ছবি,
দেবদারু গাছের ডালের
ফাঁক দিয়ে তখনও
উঠোনে এসে পড়েনি রবি।
 
কিন্তু, কি করে যেনো
ভেঙ্গে গেলো
তুলিটা কখন,
কি আর করা
কেনা পর্যন্ত, অপেক্ষা না করেই
আঙুল দিয়ে বুলালাম তখন।
 
ওমা! এ কে?
কোথায় যেনো দেখেছি তাকে
লাগেতো বড়ই চেনা,
পাইনা ভেবে এ প্রশ্নের উত্তর
হয়তোবা ছিলো তার সাথে
কোনও কালে কোনও লেনাদেনা।

 

ক্ষণিকের প্রণোদনা
হাকিকুর রহমান 
 
ক্ষণিক পিয়াসী, ক্ষণিক বিনাসী
ক্ষণিকের জানাশোনা,
হারালোকি বুঝি, ক্ষণিকের ভালে
ক্ষণিকের লেনাদেনা।।
প্রাণের পরশে হিয়া
দুলেছিলো ক্ষণ নিয়া
চমকিয়া কোথা গিয়াছে হারায়ে
ক্ষণিকের আরাধনা।।
জীবনের শেষ খেয়া, তটে যাই বয়ে
ভাবনার বেড়াজালে, বেঁধে চাই রয়ে।
দুয়ারে দাঁড়ালো গাড়ি
দিবসের শেষে পাড়ি
বুঝিতে পারিনিকো, সবই কি ছিলো তবে
ক্ষণিকের প্রণোদনা।।

 

ছড়া- নবীন প্রাত
হাকিকুর রহমান 
 
দক্ষিণেতে দিলাম পাও
উত্তরে গড়ায়,
পূবের কোণে লাগলো বাও
পশ্চিমে ছড়ায়।
দিবস শেষে আসলো নিশি
হিজল বনের ধাঁরে,
পথ হারিয়ে অহর্নিশি
মনটা খুঁজে কারে।
জোসনা ভরা গহীন রাতে
স্বপ্ন খেলে যায়,
আবির রাঙা নবীন প্রাতে
জীবন ফিরে পায়।

 

যাহা বলিবো সত্য বলিবো
হাকিকুর রহমান 
 
আহা!
কেহ কেহ কোরআন হাতে শপথ করিয়া কহে,
“যাহা বলিবো সত্য বলিবো”
আর, তারপর ভুরিভুরি মিথ্যা কহিয়া যায়!
কেহ কেহ গীতার ওপরে হাত রাখিয়া শপথ বাক্য পাঠ করে,
“যাহা বলিবো সত্য বলিবো”
এবং, সাথে সাথেই মিথ্যা বাক্যবাণে জর্জরিত করে!
কেহ কেহ বাইবেল স্পর্শ করিয়া শপথ লইয়া কহে,
“যাহা বলিবো সত্য বলিবো”
অতঃপর, সত্যটি কহিবার প্রয়োজনই মনে করেনা!
কেহ কেহ চৌদ্দগুষ্টির পিন্ড চটকাইয়াও কহে
“আমি অতিশয় সাধু”
ওহ! এই ধরাতো অদ্ভুত কিমাকার
হেথায়, সত্যের চাইতে বাড়িয়াছে মিথ্যাচার!
(বিবেক জাগ্রত হও!)

 

ব্যাকুলতা
হাকিকুর রহমান 
 
ভ্রমর কাঁদিয়া ফিরে, গহন নিশীথ ঘিরে
ভাঙ্গিতে পারেনা তবুও কেন জানি, কুসুমের নীরবতা,
তারারা পশিল যবে, দূর নীলিমায় তবে
অস্ফুট স্বরে কি যে গাহিলো, বনের তরুলতা।।
আঁধার পথটি খুঁজি, বুঝি কিনা কিছু বুঝি
ভাঙ্গনের তীরে বাহি ভাঙ্গা নাও, গাহিয়া কথকতা।।
বিহগ মিথুন জাগে, অস্ত রাগের আগে
স্বপনের দ্বারে খুঁজে ফিরি কারে, বাড়ায়ে ব্যাকুলতা।।