Wednesday, January 12, 2022

 

নীল অপরাজিতা
হাকিকুর রহমান 
 
মাঝারি আকারের একখানা ইচ্ছা
কবে জানি আনমনে
উদিত হয়েছিলো, এই প্রাণে-
সময়ের দাম্ভিকতার কাছে হার মেনে
তাকে আর বোনা হয়নি
ক্লিষ্ট মনটার উঠানে।
হার মানা হারটাকে সেইতো কবে
নিজের অজান্তেই
গলাতে নিয়েছি যে পরে-
কার যে ভাঙ্গা কাঁকনটাকে আর
জোড়া দেয়া যায়নি
তবুও প্রচেষ্টা ছিলো তার তরে।
তবে চলেছিলো শশীহীন
আলোক উৎসব
বহুকাল ধরে এই মনের কাননে-
নীল অপরাজিতা ফুলটা
ঝরেই তো গেছে
অনাদরে, কেইবা তা আর জানে।
রূপার নূপুর পায়ে পরে
কে যেনো এসেছিলো
শেষ বিকেলের একটু আগে-
স্মৃতির বেদনা ভরা সিঁথিতে
আবিরের রঙ মেখে
কোন সে করুণা মাগে।

 

গৃহহীন ভূত
হাকিকুর রহমান 
 
বেশ আছি
ভালোই আছি
অতিশয় সুখেই আছি
শাব্দিক নিঃশব্দের মাঝে বিলীন হয়ে আছি
নিজস্ব তৈরি কারাগারের মাঝে বন্দি হয়েই আছি-
একখানা
শুকতারা দেখে
গতিপথ মেপে মেপে
নাবিক হবার স্বপ্নটা দেখে
ধুলো ভরা পথে পথিক হবার ইচ্ছেটা রেখে
নিভৃত স্বপনের আবির হৃদয়ে মেখে
অপরিচিত এক গুহাবাস করেই তো আছি-
কে যেনো
লাল পেড়ে সাদা শাড়ির আঁচল ছিঁড়ে
একখানা রুমালে কি যেনো
লিখে দিয়েছিলো
সময়ের অভাবে ওটা খোলাই হয়নি
চোখ খুলে পড়ে দেখাও হয়নি
তাই, সে যে কি লিখেছিলো তাতে
তা অজানাই গেলো রয়ে-
ওদিকে নিয়তি
হাঙরের মতো করাতি দাঁতের হাসি হেসে
ঘাড়ের অতিশয় কাছে এসে
কি যেনো একখানা কথা বলে গেলো
হঠাৎ করে বয়ে যাওয়া বাতাসের তোড়ে
তা কান পর্যন্ত পৌঁছায়নি-
আর কেনো জানি
মরার আগেই
কবে কবে
হয়ে গেছি
গৃহহীন ভূত।

 

রঙের মেলা
হাকিকুর রহমান 
 
সাজিয়ে বাগান রইছি বসে
মালির দেখা নেই-
হাত বাড়িয়ে ফুল তুলেছি
ঝরেই গেল সেই।
কে যেনো ফের দিলো উঁকি
কানন পানে চেয়ে-
প্রাণের কথা বুঝলো কি আর
আঁখির ভাষায় গেয়ে।
যতই দেখি, ফুলগুলো আজ
হাসতে গেছে ভুলে-
কারণ বুঝি, মালির মেয়ে
নেয়নি তাদের তুলে।
আকাশ ছোঁয়া মেঘের সারি
যায় যে কোথায় ভেসে-
ভুবনজোড়া রঙের মেলায়
হারিয়ে গেলাম শেষে।

 

জীবনের মানে
হাকিকুর রহমান 
 
দু’চার জনা বললো ডেকে
এনেছি, তোরই তরে
তৈরি করে
একখানা উপঢৌকন-
আহা! অতিশয় প্রসন্ন হয়ে
গ্রহণ করে তা
খুলে দেখি,
ভিতরে তো কিছুই নেই
রয়েছে সেখানে
ভাঙ্গা একখানা চৌকন।
তার মানেটা কি?
বোঝার আগেই
হাত ফসকে
সেটা গেলো মাটিতে পড়ে-
ছিলোতো যাই কিছু, ভাঙ্গা
সেটা আরো খন্ডিত হলো
আর তাকে
নেয়া হয়নিকো কভু গড়ে।
ওহ! তুমিতো দ্যাখোনি তা,
কারণ, তুমি তো
অতি সুখে ছিলে চোখ বুঁজে-
এদিকে আমি, গতরে খেটেই
তো হলাম সারা, আর
জীবনের মানেটা কি?
সারাক্ষণ বেড়াই
সেটাই খুঁজে।

Tuesday, January 11, 2022

 

কাঠপুতুলের জীবন
হাকিকুর রহমান 
 
এই যে আমরা, যারা
নিত্তি খেটে খাই
আর কম্মের ফাঁকে,
একটুখানি ফুরসুত পেলে
যাবর কেটে সময় কাটাই-
তা, আমাদের প্রাণ ভোমরা গুলো কি
কারো কাছে লগ্নি দেয়া আছে?
যাতে করে ফুড়ুৎ করে
উড়ে না যাই পাছে-
কিম্বা, কেউ হয়তো চিকন সুতোয় বেঁধে
ঝুলিয়ে দিয়েছে সেই কবে,
আর আমরা দুলেই চলেছি
দুলেই চলেছি
চমৎকৃত এই ভবে-
চোখের ওপর দিয়েই ঘটে যায়
কতই ঘটন-অঘটন,
পায়ে-পা ঠেকলেও কিছু কওয়ার
মুরোদ নেই বিলক্ষণ-
কাঠপুতুলের মতই তো
হাত-পা চারখানি নাড়াই,
দুনিয়াটা কি থেমে থাকে
কারো তরে?
ওটা ছুটেই চলে,
আমাদের মতামত ছাড়াই-
ভাঙ্গা রাস্তাটা আরও পেটাক
পেটাতে পেটাতে আরো যাক ভেঙ্গে,
জানি আমাদের থালাতে জুটবেই
কিছু শাঁকপাতা
না হয়, নেবোই কিছু
এখানে ওখানে মেঙ্গে।

 

নব প্রভাত
হাকিকুর রহমান 
 
হয়েছে তো ভোর, নব দিবাকর
ছড়ায়ে দিয়েছে তার
কোমল পরশ
উন্মুক্ত এই দ্বারে-
আনকা আলোতে, দেখি তার মুখ
এ হিয়ার মাঝে
দিলো কে পুলক
চিনে কি নিতে
পেরেছি তারে।
দখিনা দিলো তার, আলতো ছোঁয়া
পথভোলা পথিক
তাইতো বাড়ালো
আবার নতুন করে
পথে পা-
সে ছোঁয়ায় দুলে ওঠে
বাহারি প্রজাপতি
আর চাষী বউ মন খুলে
চায় ফসলের ক্ষেতে,
সোনালী ধানের শিষে
ভর করে তা।
নয়নেতে কাজল, দিয়েছে
মালিনীর মেয়ে
আজ নাকি পরবেতে
তার ছুটি-
পূবের আকাশে, হালকা মেঘের
ফাঁকে, দিবাকরের আলো
পশিল তার
চরণে লুটি।

 

জোসনার গৌরব
হাকিকুর রহমান 
 
একাকী কনকচাঁপা,
ফুটেছে ওই কাননের কোণে
বসন্তের অন্তিম নিঃশ্বাসে-
ধূসর গ্রীস্ম কবে জানি এসে
গেছে ফিরে, তাই বসে থাকা
নবীন বরষার আশে।
কোন তাপসী ধ্যানে রয় রত
আধেক জেগে
আধেক ঘুমের মাঝে থেকে-
ঝরে যাওয়া পাতা
মর্মর ধ্বনি তোলে
হৃদয়ের মাঝে, যায় কারে ডেকে।
গোধূলি সেতো কোনও এক
নব যৌবনা বালিকা-
রয়েছে অপেক্ষায় সাঁঝের কোলে
দেবে ডুব
আর, ওইদিকে অন্য কোনও তাপসী
অপেক্ষায় রয়,
হাতে লয়ে শূন্য থালিকা।
কনকচাঁপাটাকে ডেকেছিলাম
বিদায়ের আগে
হাত দু’টি নেড়ে-
কার দীর্ঘনিঃশ্বাসই বয়েছিলো
ঘাড় বেয়ে,
আর নয়নের ঘুম
নিয়েছিলো কেড়ে।
মর্মে মর্মে আজি উপলব্ধি করি
বাতাসে ভাসে
শুধু, হারানোর অনুভব-
তাইতো অপেক্ষায় থাকা
দীপালি জ্বালায়ে,
কবে জানি ছড়াবে
এই প্রাণে জোসনার গৌরব।

 

মেঘের কান্না
হাকিকুর রহমান 
 
একটা স্তব্ধ প্রহর, আর এক
স্তব্ধ প্রহরের সাথে
বিলীন হতে চেয়ে-
নির্বাক, নৈঃশব্দের মাঝে
একাকার হলো।
তবে, ইচ্ছা-অনিচ্ছার
বৈপরীত্যের মাঝে
টানাপোড়ন খেয়ে খেয়ে
প্রহরগুলো,
খন্ডিতই রয়ে গেলো।
নদীর তৃষ্ণা, মেটাবে কি সাগর?
নাকি সাগরের তৃষ্ণা
মেটাবে নদী!
পাপিয়ার তৃষ্ণা, মেটাতে পারেনি
কোনও মেঘ।
কোনও এক সলাজ কুমারীর
আঁখি হতে
কবে জানি ঝরেছিলো
কিছু জল-
জানতে পারেনি কেউই তার কারণ,
শুধু উড়ে যাওয়া
মেঘটাই বুঝেছিলো-
আর তাই কেঁদেছিলো
দু’জনfই একসাথে।

 

কালের স্রোত
হাকিকুর রহমান 
 
টাকা-কড়ি, কিছুই আনতে পারিনিকো
আনতে পারিনিকো, কোনও দুর্লভ রতন-
সাথে করে শুধুই এনেছি
একখানা অভাগা ভিখিরী মন।
আশা করেছিলাম সীমাহীন,
হয়তোবা দু’হাত বাড়িয়ে
চাঁদটাকে ছুঁয়ে দেবো,
যেমন ছোঁয় অন্য কোনও উদাসী-
দ্বিধা বিজড়িত কন্ঠে
গাইতে চেয়েছিলাম, কোনও এক
অচেনা সুরের গান,
যদিও কালের স্রোতে, তা
হয়ে গ্যাছে অতিশয় বাসি।
ভালোবাসা! তাকি ঐ
পুরোনো ঝাউগাছের
ঝরে যাওয়া পাতা?
বিস্তৃত মননের সীমারেখায়
কি কথা এখনও ঘুরে ফিরে,
যেনো অনেক আঁধারির মাঝেও
ছড়ায় সে কোন আলোর বারতা।
ওদিকে লক্ষ্য করি, ঠিক মাঝরাতে
আঙনখানা ঠিকই রয়ে গেলো
অতি শূন্য-
তবে, শুধুই দু’মুঠো স্মৃতিই
সাথে করে এনেছি,
তা, হৃদয়খানা
যতটাই হোক না দৈন্য।

 

টংকা
হাকিকুর রহমান 
 
“চাহিবামাত্র ইহার বাহককে দিতে বাধ্য থাকিবে”
ইহাই হইল টংকা-
ইহাই হইল পৃথিবীর যত ষড়যন্ত্রের মূল
ইহাকে লইয়াই যত শংকা
দিবা-রাত্রি চলিতেছে কত ঝগড়া- ফ্যাসাদ
শুধুই ইহার তরে-
গত্যন্তর দেখিনা ইহার অনুপস্থিতিতে,
থাকি সারাক্ষণ ডরে।
ইহা থাকিলেও বিপদ, না থাকিলেও বিপদ
বিপদ ত্রিশংকুল-
বাড়ায় বিভেদ- বৈষম্য,
ইহাই যতো অনর্থের মূল।
এমন কোনো কর্ম নাই,
যাহা ইহা ছাড়া করা যায় সম্পাদন-
ইহার ফলেই উত্থান, ইহার ফলেই পতন
বাকি সব বৃথা আস্ফালন।
অনাদিকাল ধরিয়া চলিয়াছে সমাজে
ইহার তরে যতো হানাহানি-
ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় রহে ব্যস্ত সারাক্ষণ ইহার আধিক্ষে
আর চলে নিরন্তর টানাটানি।

 

ভাঙ্গনের তীরে বাঁধা বাসা
হাকিকুর রহমান 
 
চাঁদটা কি ঠিক চাঁদের মতন
আলো দেয়?
নাকি লুকোচুরি খেলে
মননের আঙিনায়।
সেই আলোতে, বুড়ো অশ্বত্থটা
জেগে রয় রাত্রি জুড়ে,
তার সাথে, দু'জোড়া
চক্ষু জাগে
স্বপন রাত্রির চূড়ে।
কার কাজল কালো চোখে
কোনও এক অজানা পথিক
রেখেছিল কিনা
তার অশ্রুসজল চোখ,
কোনও এক অপরিচিতা কুমারীর
বুকে, সে কি রেখেছিলো
তার কায়া,
বাড়িয়ে দিয়েছিলো কি
প্রণয়ের ঝোঁক।
তবে, আঁখি জোড়া
যদিওবা মিলিত হয়েছিলো
কোনও এক নিশুতি রাতে,
আর, ভাঙ্গনের তীরে
বাঁধা বাসাখানি
কেনো জানি গিয়েছিলো ভেঙ্গে
কোনও এক অজানা প্রাতে।

 

Apathetic wind
Hakikur Rahman 
 
Floating in the air, the windy breeze
All the tears and smiles were gone.
Like the mist
Floating my memories
The torned wire of the harp
Speech of consciousness
Gave me a summon.
With anxiety, kept the door open
Sit in excitement
Relaxed!
Never knew
Hold tight the stir again
Hanging in my neck, the loser’s chain.

 

Enshrine
Hakikur Rahman 
 
Awake me through unwritten
music of mine,
If possible, sing me a song
that would be perfect
and divine,
Perhaps, that is the way
the heart could refine,
But, no one knows the
state of solitude,
which would enshrine.

 

শেষ অঙ্গীকার
হাকিকুর রহমান 
 
প্রদীপের মায়াবী ছায়াতে
কি দোলা দিলো যে এই কায়াতে।
পিয়াসি পরাণে ছড়ায়ে দিলো
সে এক আলোর বীজ,
সাগরের নীলে ভাসালো কার
জাহাজখানি, নোঙ্গর তুলে নিজ।
নোঙ্গরটা ছিলো মনে হয়
কোনো পাথরের সাথে আটকিয়ে,
তবে, ঝরে যাবার আগেই
এক নাম না জানা নক্ষত্র
আলো দিয়েছিলো, নিজেকে বিলিয়ে।
নাবিকের অজানা যাত্রা পথে
হঠাৎ করে পড়লো
কোনো এক অজানা দ্বীপের ছায়া,
আর, সাথে করে শুনেছিলো
কিছু পাতা ঝরার কান্না
সেইসাথে বেড়েছিলো যেনো
কার তরে, আরও কিছু মায়া।
শেষ বিকেলের কোলে বসে
কে যেনো গেয়েছিলো
না বলা কথার সুরে কিছু গান-
কিছুই বোঝা
যায়নিকো কভু তার,
প্রদীপের আলোটা
যতই উজ্জ্বলতর
হোক না কেনো-
কে জানি অবশেষে
রাখেনি তার শেষ অঙ্গীকার।

 

কালের ঘণ্টাধ্বনি
হাকিকুর রহমান 
 
চাঁদের রঙ কি সাদা? নাকি নীল, নাকি রুপালী-
কার বিষাদের চিহ্ন লেগে আছে তাতে,
কোন মহাজ্যোতিষীর খাবারের থালাটা যে
রয়ে গেলো, একেবারে খালি।
জোর করে ফুঁ দিলেই কি
মোমবাতির আলোটা যায় নিভে?
সাগরের বিশালতায় ক্ষুণ্ণ হয়ে
কোন নাম না জানা নাবিক
আর সে পানে ধায়নি,
কেইবা আছে যে, সেটাকে পাড়ি দিবে।
মেঘ, নদী, বৃষ্টি, ব্যাঙের ছাতা, চক্ররেখা,
হোগলা পাতার ছাউনি-
সবই তো মহানন্দার ঢলে গিয়েছে ভেসে,
চিন্তার পরিধিটাকে যতই ব্যাপ্তিত করা হোক
কালের ঘণ্টাধ্বনি শোনালো কে যেনো
নীরবে-নিভৃতে, কর্ণের অতিশয় কাছে এসে।

 

ব্রহ্মান্ড
হাকিকুর রহমান 
 
ভৃগু, মরিচি, অত্রি, পুলহ,
পুলস্ত্য, ক্রতু, বশিষ্ঠ-
এই সাতটি নক্ষত্ররা হলো সপ্তঋষি,
মহাজাগতিক বিস্ময় এরা,
এদের গতিবিধিতে পরিলক্ষিত হয়
এই ছায়াপথের ভূত, ভবিষ্যৎ ও বর্তমান- অহর্নিশি।
সপ্তর্ষিমণ্ডল সারা বছর ঘুরে ধ্রবতারার চারিদিকে,
ক্রতু আর পুলহ পড়ে এক সরলরেখায়-
আর সিংহ রাশিতে নির্দেশ করে বিপরীত রেখাটিকে।
আকাশ, বায়ু, অগ্নি, জল, ভূমি,
অহংকার ও মহৎতত্ব-
এই সপ্ত মহাআবরণ দিয়ে
এক একটি ব্রহ্মাণ্ড গঠিত,
স্রষ্টার সৃষ্টিতে আছে অনন্তকোটি ব্রহ্মাণ্ড
ও গ্রহ-নক্ষত্রের সমাবেশ,
এভাবেই প্রাচীন কিতাবে পঠিত।